ফুটবলকে পায়ের রানের ওপর রেখেই কলাকৌশল দেখানোসহ দৌড়াতে পারেন চাঁদপুরের সোহান। তার এমন প্রতিভাকে দেশের ফুটবলে কাজে লাগাতে স্বপ্ন দেখছেন সোহানের মা-বাবাসহ স্বজন ও এলাকাবাসী। ইতোমধ্যেই সোহানের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন ফুটবলার আমিনুল হক এবং প্রশাসন।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে সোহানের পরিবারের পাশে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মতলব উত্তর ইউএনও মাহমুদা।
স্থানীয়রা জানান, সকালে ঘুম হতে ভোরে উঠেই বোনের সঙ্গে মায়ের কাছে বই নিয়ে পড়ালেখা করতে বসে সোহান। এরপর দৈনন্দিনের পড়ালেখা শেষ করে স্কুল ড্রেস পড়ে বোনের সঙ্গে চলে যায় পাঠশালায়। সেখান থেকে ফিরে কিছু একটা খেয়েই ভোঁ-দৌড় রাস্তার পাশে সোহানের বাবার সাইকেলের দোকানে। বাবা সাইকেল মেকানিক। কাজের ফাঁকে বা অবসরে ছেলেকে নিয়ে দোকানের সামনের রাস্তায়, কখনো আবার পাশের বালুর মাঠে ফুটবলসহ নেমে পড়ছেন খেলায়। আর এমন দৃশ্য এখানকার সবার মুখস্থ।
সোহানের মা রেহেনা বেগম জানান, সোহান প্রধান ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট চাঁদপুরের মতলব উত্তরের জহিরাবাদ ইউপির ১নং ওয়ার্ডের সাড়ে পাঁচ আনী গ্রামের প্রধানিয়া বাড়িতে জন্মেছেন। তার বাবা মো. সোহেল একজন সাইকেল মেকানিক এবং তিনি গৃহিণী। পরিবারে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মোসা. সুরমা নামে সোহানের এক বড় বোন রয়েছে। কয়েক বছর আগে এক সন্তান পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার পর এখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছোট্ট সোহান ও একমাত্র মেয়ে সুরমাকে নিয়েই বেঁচে আছেন তারা। এখন ইচ্ছা একটাই সোহান একসময় দেশের নামকরা ফুটবলার হবে।
সোহানের বাবা সোহেল প্রধানিয়া জানান, অর্থসংকটে ভালো পুষ্টিকর খাবার সোহানের জন্য দিতে পারেন না তারা। একটি টিনশেড ঘরে কোনোমতে করছেন বসবাস। আর পরিবার ভালো না থাকলে সীমাবদ্ধতায় থেমে যেতে পারে সোহানের প্রতিভা। তাই তাদের পাশে তিনি সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
তিনি আরও জানান, ২৫ বছর ধরে তিনি সাইকেল মেকানিক। নিজের ফুটবল খেলার প্রতি ইচ্ছা থাকলেও তা নানা কারণে সম্ভব হয়নি। এখন ছেলেকে ভালো ফুটবলার দেখতে চান তিনি। তাই নিজেই পরিশ্রম করছেন ছেলেকে নিয়ে। হয়তো সুযোগ হলে সোহান একসময় দেশের সম্পদ হিসেবে মেলে ধরবে সে আশায় স্বপ্ন দেখছেন। ছেলেকে বিকেএসপি কিংবা ভালো কোনো ফুটবল ক্লাবে ভর্তি করানোর ইচ্ছা তার।
সোহান বলেন, আমার বাবা ও এলাকার বন্ধুদের সঙ্গে আমি ফুটবল খেলি। পছন্দের খেলোয়াড় মেসি। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে ভালো ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে দেখাতে পারি।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোহানের ফুটবল নিয়ে ক্রীড়াকৌশলে আকৃষ্ট হয়ে তার পাশে থাকার আশ্বাস নিয়ে তার বাড়িতে ছুটে আসেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে ৫ বছর বয়সী এই মেসিখ্যাত পিচ্চি সোহানের দায়িত্ব এখন থেকে বিএনপি নিয়েছে। তারেক রহমানের নির্দেশেই এই দায়িত্ব নেওয়া হলো। সোহানের বয়স ৭ বছর হওয়ার পর বিকেএসপি কিংবা যে কোনো ভালো মানের ফুটবল ক্লাবে তাকে ভর্তি করারও আশ্বাস দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সোহানের ফুটবল খেলা নিয়ে দক্ষতা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তারেক রহমান দেখেছেন। তার নির্দেশেই আমি দলের হয়ে সোহানের বাড়িতে ছুটে এসেছি। এখন কিছু আর্থিক সহায়তা সোহানের জন্য দলের পক্ষে দেওয়া হলো এবং এখন থেকে প্রতি মাসে সোহানের জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠানো হবে।
আমিনুল হক বলেন, শুধু সোহানই নয় বরং এরূপ গ্রাম-গ্রামান্তরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাবান প্রতিজন খেলোয়াড়কে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা রয়েছে বিএনপির। যদি আগামীতে রাষ্ট ক্ষমতায় বিএনপি আসে তাহলে অবশ্যই এর সুফল এই খুদে খেলোয়াড়রা পাবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সোহানদের পাশে সবসময় থাকব এতটুকু আশ্বস্ত করছি।
এ বিষয়ে সোহানের পরিবারকে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা হতেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি। কালবেলাকে তিনি বলেন, মাত্র প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা সোহানকে সঠিক গাইডলাইনই পারে এগিয়ে নিতে। তাকে তুলে ধরলেই গ্রামাঞ্চলের অন্য শিশু কিশোররাও সোহানকে মডেল হিসেবে ধরে খেলাধুলায় মনোযোগী হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, সোহানের ফুটবল নিয়ে কলাকৌশল সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি অভিভূত। তার প্রতিভা যাতে কোনো সীমাবদ্ধতায় থেমে না যায় সে জন্য তার ও তার পরিবারের পাশে উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন থাকবে। আমরা আমাদের সুযোগ অনুযায়ী তার জন্য কী করা যায় সেদিক নিয়ে কাজ করব।
মন্তব্য করুন