বন্ধ হয়ে গেল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় অবস্থিত উত্তরবঙ্গের সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস। উত্তরবঙ্গের ২২ জেলার যাত্রীদের কাছে এটি ‘ফুড ভিলেজ’ নামেই পরিচিত। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীতে আসা-যাওয়ার পথে দূরপাল্লার প্রায় সবকটি জেলার বাসই যাত্রাবিরতি দিত এই হোটেলটিতে। তবে ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে হোটেলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেয় কর্তৃপক্ষ। হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হোটেলের বিভিন্ন পদে কাজ করা প্রায় ৭শ থেকে ৮শ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বেন বলে জানিয়েছেন সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা।
জানা যায়, মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-রংপুর চার লেনের কাজের পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় নির্মাণ হবে ইন্টারচেঞ্জ। আর এই ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণেই বন্ধ হয়ে গেল হোটেলটি। এর সঙ্গে বন্ধ হয়ে গেল হোটেলটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চা-পান-সিগারেটের প্রায় ৫০টিরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান।
এ ছাড়াও এখন দূরপাল্লার এই বাসগুলো কোথায় যাত্রা বিরতি দেবে এমন প্রশ্নও রয়ে গেছে। হোটেলটি বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন ঢাকা-পাবনা রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস সূত্রে জানা যায়, হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাস এসআর গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৩ সালের ২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন এসআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সাবেক সংসদ সদস্য জি.এম সিরাজ। সেদিন থেকে পথচলা শুরু করে ১০ বছর পর বন্ধ হয়ে গেল হোটেলটি।
হোটেলের কর্মচারীসহ চেয়ার-টেবিল পেতে হোটেলের সামনে পান-সিগারেট বিক্রি করা দোকানদাররা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, উত্তরবঙ্গের সব জেলার গাড়িগুলো এখানে দাঁড়ানোর কারণে যাত্রীরা এই হোটেলে নামতেন। তাদের বেশিরভাগই হোটেলের সামনের দোকানগুলো থেকে পান, সিগারেট, চিপস, পানীয় কিনতেন। এখন হোটেল বন্ধ হয়ে গেল। আর কোনো বাসও এখানে দাঁড়াবে না। তাই আমাদের এখানে আর ব্যবসা রাখার সুযোগ নেই। এখন কোথায় গিয়ে নতুন করে কী ব্যবসা করব, জানা নেই। হোটেলটা বন্ধ হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়লাম আমরা।
হোটেল ফুড ভিলেজ প্লাসে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, এখানে ওয়েটার, সহকারী, বারবিকিউ, চাইনিজ, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বাবুর্চিসহ বিভিন্ন পদে প্রায় আমরা প্রায় ৮শ শ্রমিক কাজ করতাম।
ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলের এজিএম ইয়াহিয়া খান বলেন, টানা ১০ বছর সেবা দেওয়ার পর ইন্টারচেঞ্জ প্রকল্পের কারণে হোটেলটি বন্ধ করে দিতে হলো। আসলে ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলটি উত্তরবঙ্গের মধ্যে একটা সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হয়তো অনেকেরই মন খারাপ হবে, সমস্যা হবে, কিন্তু আমাদেরও কিছু করার ছিল না। এখন হাটিকুমরুল এলাকায় আর দূরপাল্লার ভালো বাসগুলোর যাত্রাবিরতি দেওয়ার তেমন কোনো জায়গাও থাকল না।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ওসি বদরুল কবীর বলেন, হোটেল ফুড ভিলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে বা যানজট সৃষ্টির মতো কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিশেষ করে পাবনাগামী বা পাবনা থেকে ঢাকাগামী যে বাস এবং যাত্রীগুলো আছে তাদের জন্য একটা বড় সমস্যা হবে।
বাস মালিকরা জানান, ফুড ভিলেজ প্লাস হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়বেন পাবনা থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে পাবনাগামী যাত্রীরা। পাবনার পর থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে এলেঙ্গার আগ পর্যন্ত তেমন কোনো ভালো মানের হোটেল না থাকায় বাসগুলো কোথায় যাত্রাবিরতি দেবে বা কোথায় দাঁড়াবে সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন