রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের আলোচিত নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন মসজিদের ইমাম ও স্থানীয় ছাত্রলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা রয়েছেন। এর মধ্যে আটজন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব।
এর আগে নুরাল পাগলার দরবারে হামলায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে হত্যাসহ অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি, জখমের অভিযোগ এনে গত ৮ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দঘাট থানায় মামলা করেন। এতে অজ্ঞাত পরিচয়ে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এছাড়াও ঘটনার দিন গত ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসের অভিযোগ এনে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। আসামি সব অজ্ঞাতনামা হলেও এ দুই মামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব বলেন, নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা, লাশ পোড়ানোর ঘটনায় আটজন ও পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ১৬ জনসহ মোট ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও লাশ উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য, ভিডিও ফুটেজ ও প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধের সাথে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে। মামলায় নিয়ে তদন্ত কাজে কেউ প্রভাব বিস্তার, অনৈতিক তদবির করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের দরবারে হামলা একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা প্রশাসন থেকে সবাই আন্তরিক ছিলাম বিষয়টি সমাধানের জন্য। এর জন্য উভয় পক্ষকেই ডেকেছিলাম। আমরা কয়েক দফা মিটিংও করেছিলাম। আলেম সমাজের যে ৩টি দাবি ছিল তার মধ্যে দুইটি দাবি তারা মেনেও নিয়েছিল। শুধু কবর ওপর থেকে নিচে নামানোর জন্য তারা কিছু সময় চেয়েছিল। এই সময়টা আলেম সমাজই তাদের দিয়েছিল।
তিনি বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো গ্যাপ ছিল না। ৩টি দাবির মধ্যে দুইটি দাবি পূরণ হওয়ার পরও আলেম সমাজ বিক্ষোভ করতে চেয়েছিল। আমরা আলেম সমাজকে ডেকেছিলিম বিক্ষোভ না করার জন্য। তারা আমাদেরকে নিশ্চিত করেছিলেন- কোন ঝামেলা হবে না, শান্তিপূর্ণভাবে তারা বিক্ষোভ করবেন। কিন্তু পরে যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও প্রশাসনকে দায় দেওয়া হয়। এটা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে ইতোমধ্যেই পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরাল পাগলা। ওই দিন রাতে মাটি থেকে ১২ ফুঁট উঁচুতে গোয়ালন্দ দরবার শরিফে তার মরদেহ দাফন করেন ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা। এরপর থেকেই উত্তেজনা চলছিল স্থানীয় আলেমসহ তৌহিদি জনতার মধ্যে। দরবারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা ইমাম কমিটি, খেলাফতে মজলিস, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। পরে ৫ সেপ্টেম্বর জুমার নামাজের পরপরই নুরাল পাগলার দরবারে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়।
ওই সময় রাসেল মোল্লা নামে এক ভক্তকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড়ে নিয় গিয়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন