শালিস বিচার, পাওনা আদায় ও জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ অন্যান্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু দলীয় এ নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বিএনপির আহ্বায়ক মিন্টু মোল্লার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইটভাটা, নগর ঘাট মার্কেট ও গোডাউনের মালিক ব্যবসায়ী খলিল মাদবরের সঙ্গে সেলিম রেজা ওরফে আবদার ও বিএনপির আহ্বায়ক মিন্টু মোল্লার মধ্যে ইটভাটা সংক্রান্ত একটি বিরোধ চলমান। সম্প্রতি দিঘলিয়া থানার ইনস্পেক্টর (তদন্ত) হেলালুজ্জামানের উপস্থিতিতে তারা বিষয়টি সুরাহা করতে বসেন। কিন্তু মিন্টু মোল্লা ব্যবসায়ী খলিলকে বিচার মানতে চাপ প্রয়োগ করেন। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষই উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার সামনে গালিগালাজ করতে থাকেন। পুলিশ কর্মকর্তা বিব্রত হয়ে উভয় পক্ষকেই অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী খলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আবদারের সঙ্গে আমি কয়েক বছর আগে ইটভাটার ব্যবসায় শুরু করি কিন্তু ভাটা আমার নামে। ব্যবসায়ে লোকসান হলে ঋণ করা টাকা পরিশোধ না করেই সে চলে যায়। পরে সব ঋণ আমি একাই পরিশোধ করি। কিন্তু ২০১৯ সালের দিকে আবদার নানা মিথ্যা অভিযোগসহ মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে। এক পর্যায়ে তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। পাঁচ মাস তদন্ত শেষে পিবিআই প্রতিবেদন দেয়। আদালত সব তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে আমার পক্ষে রায় দেন। এরপর কিছুদিন আবদার চুপচাপ ছিল।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর হয়েছে আমি আমার ভাটা হেদায়েত ও হায়দার মোড়লের কাছে লিজ দিই। হেদায়েতের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার ইট নেন বিএনপি নেতা মিন্টু মোল্লা। কিন্তু কোনো টাকা দেননি বরং আরও হুমকি-ধামকি দিয়ে তার ইট বিক্রিতে বাধা সৃষ্টি করেন। এ টাকা চাইলে হেদায়েতকে মারধর করে মিন্টু মোল্লার লোকজন। এরমধ্যে আমাকে জড়িয়ে আবদারকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করান মিন্টু। আমি পুলিশের ডাকে থানায় যাই। দুই পক্ষের কথোপকথন হয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে মিন্টু মোল্লা যেসব অভিযোগ করেন তা সঠিক নয় বলে আমি পুলিশকে জানাই। এরপরই মিন্টু মোল্লা আমার ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে আমাকে গালিগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। আমাকে এখনো হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তিও মিন্টু মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মিন্টু মোল্লারা বিএনপির জন্য অভিশাপ। তিনি বিএনপির ক্ষমতা ব্যবহার করে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মামলাবাজি ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার কারণে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে মিন্টু মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কালবেলাকে তিনি বলেন, আমি ঠিকাদারিতে যুক্ত থাকার সুবাদে ভাটা চালু থাকা অবস্থায় তাদের কাছ থেকে আমি চুক্তিতে ইট কিনতাম। সেই চুক্তির মেয়াদও শেষে হয়েছে বহু আগেই। চুক্তিতে তাদের দুজনেরই মালিক হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে। এরপর ভাটাটিকে লিজ দেন খলিল। এটি সম্প্রতি অপর মালিক আবদার জানতে পেরে লিজের টাকা দাবি করেন। তবে আবদারকে মালিক হিসেবে স্বীকার করতে চাননি খলিল। এজন্য থানার শরণাপন্ন হয় আবদার। এ সময় আমার কাছে থাকা প্রমাণপত্র স্বরূপ চুক্তিনামাটি সাক্ষ্য হিসেবে প্রদর্শন করতে অনুরোধ জানায়। আমি প্রমাণপত্র দেওয়ায় খলিলের বিরুদ্ধে গেছে বিধায় সে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
এ বিষয়ে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচএম শাহীন কালবেলাকে বলেন, ইটভাটার মালিকানা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছিল। আমরা দুই পক্ষকে থানায় ডাকি। ওই সময় তারা কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা থামিয়ে দিয়ে আদালতের মাধ্যমে সমাধানের জন্য আহ্বান জানাই। পরে আদালত ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ দেন। আমরা দুই পক্ষকেই নোটিশ জারি করেছি।
মন্তব্য করুন