বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে শুরু হয়েছে পর্যটন মৌসুমের আমেজ। সৈকত নগরীতে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও বিভিন্ন পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠান নতুন সাজে সেজেছে। বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। শহরজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে নতুন আশার আলো। তবে আজ কেন পর্যটন নিয়ে এত আলোচনা। কারণ আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
তবে এই আনন্দঘন পরিবেশের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে ক্ষোভ ও সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে— ‘বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’ নামের জেলা প্রশাসনের একটি সংস্থা আত্মীয়স্বজনকে কার্ড দিয়ে সৈকতে যত্রতত্র ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েছে। এর জের ধরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর জেলা প্রশাসক সালাউদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়।
একইভাবে, ‘টমটম ও মিশুক’ নামের প্রাণঘাতী বাহনের লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগে কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুবাইয়া আফরোজকে প্রত্যাহার করা হয়। এ বিতর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিনের নামও উঠে আসে। তাকেও পরে রাঙামাটি বদলি করা হয়। তবে তাদের সময়ে নেওয়া বহু সিদ্ধান্ত এখনো বহাল থাকায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তা। গত বছর সরকারি বিধিনিষেধের কারণে ভরা মৌসুমেও মাত্র দুই মাস দৈনিক দুই হাজার পর্যটক ভ্রমণের সুযোগ পান। এবার এখনো স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই— কতজন পর্যটক দ্বীপে যেতে পারবেন কিংবা জাহাজ চলাচল কবে থেকে শুরু হবে।
দ্বীপের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার পর্যটকের ভ্রমণ নিশ্চিত করা গেলে তাদের বছরের আয়ের পথ উন্মুক্ত হবে। কিন্তু অনিশ্চয়তার কারণে এ বছর হোটেল-রিসোর্ট সংস্কার বা মৌসুমি প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান অযত্নে পড়ে আছে।
সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শিবলী আজম কোরেশি বলেন, ‘কখন পর্যটক আসবেন, জাহাজ চলবে কি না— এ বিষয়ে এখনো কোনো বার্তা নেই। এতে ব্যবসায়ীরা চরম দুশ্চিন্তায় আছেন।’
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কক্সবাজার ব্যবস্থাপক রায়হান উদ্দিন আহমেদ জানান, দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও পর্যটন মেলাসহ নানা আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, “আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এবারের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত গত বছরের নিয়মেই পর্যটক পরিবহন চলবে।”
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (টুয়াক)-এর সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন সারা বছরই পর্যটক আসছেন। তাই মৌসুম নিয়ে বিশেষ তোড়জোড় নেই। তবে সেবার মান যেন বজায় থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সারা বছরই নিরাপত্তা থাকে, তবে এখন তা আরও জোরদার করা হয়েছে।’
বিশ্ব পর্যটন দিবসে কক্সবাজারে উৎসবের আমেজ থাকলেও সেন্টমার্টিনের অনিশ্চয়তা, প্রশাসনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা দেশের পর্যটন শিল্পকে এখনো বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে রেখেছে।
মন্তব্য করুন