কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সততাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র : কাদের গনি চৌধুরী

কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সভায় কাদের গণি চৌধুরী। ছবি : কালবেলা
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সভায় কাদের গণি চৌধুরী। ছবি : কালবেলা

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সাংবাদিকতার মূলভিত্তি হচ্ছে সততা। একজন ভালো সাংবাদিক কখনো মিথ্যে বা পক্ষপাতদুষ্ট খবর প্রচার করেন না। সত্য তথ্য যাচাই করে, নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে খবর পরিবেশন করা তার মূল কাজ।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় সম্পদ বিশ্বাসযোগ্যতা। যে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা যত বেশি, দর্শক-শ্রোতা এবং পাঠকের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। তাই জনস্বার্থে, সংবাদমাধ্যমের স্বার্থে এমনকি নিজ স্বার্থেই সাংবাদিককে তাদের প্রাত্যহিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নৈতিকতার চর্চা করতে হয়। সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা হলো বস্তুনিষ্ঠতার জায়গা। বস্তুনিষ্ঠতায় ঘাটতি পড়লে সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা আসে। তাই বস্তুনিষ্ঠতা খুবই জরুরি।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সভায় তিনি এসব বলেন।

কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সবাপতি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শামীম উল হাসান অপুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়েদুর রহমান শাহীন, দফতর সম্পাদক আবু বকর, নুরুন্নবী বাবু, এম এ জিহাদ, আল মামুন সাগর, মো: বকুল আলী, ইব্রাহীম খলিল, খালিদ হাসান সিপাই, আব্দুম মুনিব, মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু, মীর আল আরেফীন বাবু, হায়দার আলী, মুজিবুর শেখ, মাহফুজ উর রহমান, সিহাব উদ্দিন, তারেকুল ইসলাম তারেক প্রমুখ।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র একটি দেশ ও জাতিকে যেমন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, আবার জাতির সর্বনাশও করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংবাদ পরিবেশনই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিরপেক্ষ বস্তুনিষ্ঠ খবর সমাজে শান্তি আনে, আর মিথ্যা খবর কখনো সমাজকে বিষিয়ে তোলে, অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সতর্ক হয়েই লিখতে হয়। তাই সাংবাদিকরা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি নীতিসচেতন। এটি তাদের হতেই হয়।

তিনি বলেন, অসীম ত্যাগ ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকরা সত্য তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরেন। তাই সাংবাদিকরা জাতির বিবেক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। সাংবাদিকরা হলেন মানবতার অতন্দ্র প্রহরী। সাংবাদিকদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ‘ওয়াচডগ’ বলা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে, ন্যায় ভিত্তীক সমাজ তৈরিতে, অন্যায়, দূর্নীতি আর ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে জনগনকে জাগ্রত করতে, মানুষের সত্যিকারের কন্ঠস্বর হয়ে সাংবাদিকরা পারেন সমাজে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে। এটিই আমাদের করতেই হবে। না হয় সাংবাদিকদের যে সম্মানসূচক উপাধি দেয়া হয়েছে এসব কলঙ্কিত হবে।

সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,পশ্চিমা দুনিয়ায় গণমাধ্যম মালিকানার সামন্ত প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারলেও বাংলাদেশে কনটেন্টের মালিক আসলে মালিকরাই। একটা সময় অল্প অল্প করে মালিকরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে গণমাধ্যমকে কিছু কিছু করে ব্যবহার করলেও এখন সেটাই কোনও কোনও গণমাধ্যমের মূল কাজ। এর সাথে নতুন করে বড় আকার যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থ। ফলে অনেকেই বলে থাকেন, ‘সম্পাদকরা আসলে করপোরেট এডিটোরিয়াল ম্যানেজার।’ সাংবাদিকরা হলেন করপোরেট এডিটোরিয়াল এক্সিকিউটিভ। করপোরেট পলিসি ও সম্পাদকীয় নীতিতে কোনো পার্থক্য নেই। সাংবাদিকরা সেই নীতির বাস্তবায়ন করেন সাংবাদিকতার নামে।

দলদাস সাংবাদিকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় দলদাস সাংবাদিকতা এতই বেড়েছিল যে, সাংবাদিক আর রাজনৈতিক কর্মীর মধ্যে ফারাক খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। যা সাংবাদিকতার মর্যাদাকে ম্লান করে দিয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট সরকার পতন হলে সাংবাদিকদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ পালিয়েছেন, আবার কেউ কেউ পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেক সাংবাদিক পদ-পদবি হারিয়েছেন। এগুলো দুঃখজনক ও অস্বাভাবিক বিষয়। তবে যারা পালিয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন কিংবা পদ হারিয়েছেন তাদের লেজুড়বৃত্তি ও দালালি নিশ্চয়ই অযৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। গণমাধ্যমকে তারা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গায় ধরে রাখতে পারেনি। সরকারকে তুষ্ট করতে গিয়ে তারা জন-আকাঙ্ক্ষার কথা ভুলেই গিয়েছিল। এখানেই গণমাধ্যমকর্মীদের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।

তিনি বলেন, অনেকে মালিকপক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজেদের নৈতিক অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। অনেকেরই নিজের চাকরি ও পরিবারের ভরণ-পোষণের চিন্তা করতে হয়েছে। এ বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু অনেক সাংবাদিক লেজুড়বৃত্তি ও সরকারের নির্লজ্জ দালালি করে অনেক অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। অনেকে একাধিক গণমাধ্যমের মালিক হয়েছেন। সঙ্গে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। তাদের বিষয়টি ভিন্ন লেন্সে দেখার যৌক্তিকতা আছে। তারা গণশত্রুদের মুখোশ উন্মোচন না করে গণশত্রুদের দালালি করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা। অনেকক্ষেত্রে তাদের অনৈতিক সুবিধার বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ।

বিএফইউজে মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সত্যের আরাধনা। লেখনীর মাধ্যমে সাংবাদিকরা সত্য উদঘাটন, দুর্নীতি উন্মোচন ও জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে। যার ফলে আমাদের দেশে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত দুই দশকে ৬৮ জন সাংবাদিককে জীবন দিতে হয়েছে। আহত হয়েছেন শত শত সাংবাদিক। পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন সাংবাদিক নির্যাতনের খবর দেখতে হয় আমাদের।তাই পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সাংবাদিকরা অনেক ধরনের হুমকি, হেনস্তা এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এতে সাংবাদিকদের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে একটি শক্তিশালী এবং কার্যকর আইন প্রণয়ন করা অত্যন্ত জরুরি।

তিনি বলেন, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যেমন পুঁতে রাখা হয় স্থলমাইন, তেমনি সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে নানা ধরনের স্থল মাইন ছড়িয়ে আছে। এই স্থলমাইন হচ্ছে বিভিন্ন নিপীড়নমূলক আইন। সাংবাদিকদের ধরতে অন্তত ২০টি আইন আছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এমন আইন রয়েছে ৩২টি।এমতাবস্থায় সাংবাদিকরা কিছু লিখতে গেলে, বলতে গেলে ৩২ বার ভাবেন। আইনের ফাঁদে পড়ার ভয়ে অনেকে সেলফ সেন্সরশিপ করতে বাধ্য হন।

ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের এক বছর পরও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী কালো আইন বাতিল না হওয়ায় কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার জন্য মামলা একটি বড় ঝুঁকি আর হয়রানির ক্ষেত্র। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো প্রকট। দেশে বিদ্যমান বিচার ব্যবস্থা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বছরের পর বছর মামলা চলে। এসব ক্ষেত্রে যারা মামলা করেন তারা সাধারণ প্রভাবশালী, বিত্তশালী কিংবা ক্ষমতাধর। তাদের খরচ চালাতে অসুবিধা হয় না। সাংবাদিক, সম্পাদক ও প্রকাশককে দীর্ঘদিন ধরে হাজিরা দিতে হয়। মামলা পরিচালনার খরচ তো আছেই। অনেক পত্রিকা খরচ দেয় না। বিশেষ করে মামলা চলাকালে পত্রিকা চেঞ্জ করলে বিড়ম্বনার পড়তে হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকার সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা নীতিমালার উদ্যোগ নিয়েছে। এই নীতিমালায় আইনি সুরক্ষার বিষয়টি আসলেও চাকরি ক্ষেত্রে সুরক্ষার বিষয়টি এখানে সেভাবে আসেনি। অধিকাংশ পত্রিকা সাংবাদিকদের নিয়মিত বেতন দেয় না, পাওনা না দেয়া এবং যখন তখন চাকুরিচ্যুতির সুবিধার্থে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিয়োগপত্র দেন না। ৬ মাস পর চাকরি স্থয়ী করার নিয়ম থাকলেও তা মানেন না। ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন দেন না ৯০ ভাগ গণমাধ্যমে। চাকরি চলে গেলে বা চাকরি ছেড়ে দিলে দেনা পাওনা পরিশোধ করে না। এ বিষয়ে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট বাড়ানো উচিত। করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বাদ দেওয়া, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা এবং উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করা খুবই জরুরি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গ্রিন ডট লিমিটেডের স্নাকি নাইট অনুষ্ঠিত

এবার খাগড়াছড়িতে ৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

গোপালগঞ্জে বাস-ইজিবাইক সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে চার

দুর্গাপূজা উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জে বাংলাদেশ সনাতন পার্টির বস্ত্র বিতরণ

৩০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ফোরামের এডহক কমিটি গঠন

নাইজেরিয়ায় স্বর্ণখনিতে ভয়াবহ ধস, বহু প্রাণহানির আশঙ্কা

রাজধানীতে বগুড়া থিয়েটার পরিবার ঢাকার অভিষেক অনুষ্ঠিত

রাতে ঘুমের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি, এই তথ্য কি সত্য?

অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ২০২৫ উদযাপন

ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশে দিল ছাত্রদল

১০

ড. ইউনূসের প্রতি বিশ্বনেতাদের পূর্ণ সমর্থন

১১

মাদকবিরোধী বার্তা নিয়ে ঢাকায় খ্রিস্টান যুব অ্যাসোসিয়েশনের ফুটবল ফেস্ট 

১২

জামিনে বেরিয়ে আবারও বিএনপি নেতাকর্মীদের যুবলীগ নেতার নির্যাতন

১৩

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

১৪

নিশীথে মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা অভিযান, স্বাস্থ্যে তার অমূল্য অবদান

১৫

নদীর পাড়ে পাওয়া অবিস্ফোরিত গ্রেনেড নিয়ে খেলছিল শিশু

১৬

ঢাবিতে ১২ দিনের ছুটি, স্থগিত সব পরীক্ষা

১৭

মায়ের সামনেই দেহ থেকে শিশুর মাথা আলাদা করে ফেললেন যুবক

১৮

ড. ইউনূসের সঙ্গে ছবি তুলতে পোজ দিলেন ট্রাম্প ও তার স্ত্রী

১৯

চাকরি ছেড়ে বিসিবি নির্বাচন করবেন সাবেক বাঁহাতি স্পিনার

২০
X