ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ আর ভক্তির আবহে এবারও সাজসজ্জায় ব্যস্ত কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি পূজামণ্ডপগুলো। তবে আনন্দের এ পরিবেশে সরকারি বরাদ্দের চাল নিয়ে ভিন্ন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে অসন্তোষ।
পূজা উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, সরকারি বরাদ্দের ৫০০ কেজি চালের পরিবর্তে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্ধেক দামের টাকা, বাকি অংশ গায়েব করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর কটিয়াদী উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাজারমূল্যে যার দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু উদ্যোক্তাদের হাতে দেওয়া হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, উপজেলায় থাকা ৪২টি পূজামণ্ডপ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই সিন্ডিকেট— এমন অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
আরও জানা গেছে, চালের ডিও হাতে পেলেও উদ্যোক্তাদের চাল বুঝে নিতে বিলম্ব করান সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তারা। পরে তড়িঘড়ি করে গুদামে ডেকে এনে ফাঁকা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করিয়ে দেওয়া হয় নগদ টাকা। এ কাজে তাদের সহায়তা করেছে বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্য।
বর্মনপাড়া পূজা মণ্ডপের সভাপতি শীতল চন্দ্র বর্মণ বলেন, বরাদ্দের ডিও নিয়ে খাদ্য গুদামে যাওয়ার পরে কর্মকর্তা বলেন সাক্ষর করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান। এ সময় বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কটিয়াদী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিমাই বাবুও তাই বললেন। তখন টাকা নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। বরাদ্দের চালগুলো তাকে দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি।
আনন্দময়ী যুব সংঘের সভাপতি উষা রঞ্জন সরকার বলেন, পূজার ব্যস্ততার মাঝেই বরাদ্দ আসে। এমন সময় চাল বুঝে নেওয়া কঠিন, তাই বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দেন বলে জানান তিনি।
ফুটন্ত কলি যুব সংঘের সভাপতি লিটন রবি দাস বলেন, ইউএনও মিটিংয়ে চাল বরাদ্দের কথা জানান। পরে গুদামে গিয়ে দেখি কিছু লোক ১৫ হাজার টাকা ধরে সবার ডিও কিনে নিচ্ছে। পাশের জেলায় একই চাল ২২-২৫ হাজারে বিক্রি হলেও, আমরা ১৫ হাজারেই দিতে বাধ্য হই।
কটিয়াদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে আগত ভক্তদের আহার্য (খাবার) বাবদ বিতরণের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপের সভাপতি/সম্পাদক এসে বরাদ্দকৃত চালের ডিও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এরপর বাকি কাজ খাদ্য বিভাগের।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ বলেন, খাদ্যগুদামের ভিতরে চালের পরিবর্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চালের পরিবর্তে টাকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নকরা হবে।
এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলার ৩৮৪টি পূজামণ্ডপে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৯৭ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে কেবল কটিয়াদী উপজেলার ৪২টি পূজামণ্ডপেই বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২১ মেট্রিক টন।
মন্তব্য করুন