দুর্গাপূজার ছুটি শেষ হতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ক্যাম্পাসে ফের শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচার।
রোববার (৫ অক্টোবর) সকাল থেকে রেলস্টেশন, ঝুপড়ি, শহীদ মিনার, অনুষদ ভবন— সবদিকেই পোস্টার, লিফলেট আর প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষার্থীদের ছুটি কাটিয়ে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের ব্যালট নম্বর দেওয়া হয়। পরদিন থেকে পূজা ও শরৎকালীন ছুটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বন্ধের মধ্যে প্রার্থীরা প্রচার চালালেও সেটি ছিল বেশ নিস্তেজ। এ সময় শিক্ষার্থীরা শাটল ট্রেন, নগরীর বিভিন্ন মেস-কটেজ, ষোলশহর রেলস্টেশনে প্রচার চালান।
রোববার ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের ফিরে আসার পর এখন চারদিকে নির্বাচনী আমেজ। কেউ হাতে লিফলেট নিয়ে ছুটছেন অনুষদ ভবনে, কেউ যাচ্ছেন হলে হলে, কেউ আবার রেলস্টেশন কিংবা ঝুপড়িতে শিক্ষার্থীদের কাছে ইশতেহার তুলে ধরে ভোট চাচ্ছেন।
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, পূজার ছুটির পর ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিন আমরা শাটল ট্রেন ও ঝুপড়িগুলোতে প্রচার চালিয়েছি। ৩৫ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই ভোটাররা আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাচ্ছে। নির্বাচিত হলে তাদের দাবি-দাওয়া কীভাবে পূরণ করব, সেসব বিষয় শুনতে চাচ্ছে। আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের এজিএস প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান তৌফিক বলেন, দুর্গাপূজার ছুটির পর রোববার ক্যাস্পাস খুলেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। আমরা সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আজ (রোববার) আমরা সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান অনুষদ ও শাটল ট্রেনে প্রচার চালিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের চাওয়াগুলো জানার চেষ্টা করছি।
এক প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা : এদিকে ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনই ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামের একটি স্বতন্ত্র প্যানেল ও কেন্দ্রীয় সংসদে সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক প্রার্থী মো. শুভ হোসেন।
‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ২২ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। প্যানেলটির দাবি, তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়, পুরোপুরি শিক্ষার্থী স্বার্থে গঠিত একটি জোট।
প্যানেলের ভিপি প্রার্থী তাওসিফ মুত্তাকী চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা সমাধানে শুধু প্রশাসনের তহবিল নয়, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বেও কাজ করতে চাই আমরা।
জিএস প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চাকসুর সভাপতির পদে থাকা উপাচার্যের এমন ক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যাতে তিনি ইচ্ছামতো চাকসু ভেঙে দিতে পারেন। আমরা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্মকে স্বাধীন রাখতে সেই ক্ষমতা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
এজিএস প্রার্থী সাঈদ মোহাম্মদ ইশতেহার পাঠ করেন। তাদের ২২ দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দফাগুলো হলো— শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বা মতামত গোপনে জানানোর সুযোগ ও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা নিষ্পত্তি; চাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা এবং মেয়াদ শেষে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন বাধ্যতামূলক করা; প্রক্টরিয়াল বডিতে একজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা; শিক্ষার্থীদের জন্য কেন্দ্রীয় ডাটাবেজ ও শতভাগ অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা।
প্যানেলটির ইশতেহারে আরও রয়েছে লাইভ শাটল ট্রেন ট্র্যাকিং, আবাসন সংকট নিরসন, মেডিকেল সেবার উন্নয়ন, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নতুন উদ্যোগের অঙ্গীকার।
রোববার দুপুরে ১২নং ব্যালটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ১২ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সংসদের সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শুভ হোসেন। তার পক্ষে ব্রেইল পদ্ধতিতে ইশতেহার পাঠ করেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ অক্টোবর। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। এবার কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে, ১৪টি হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯৩ জন। প্রতিটি হলে ১৪টি করে পদ রয়েছে। মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন।
মন্তব্য করুন