গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দুদিনে অ্যানথ্রাক্সে নতুন করে আরও ৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে এ উপজেলায় মোট ২২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স পাওয়া গেছে। এতে আতঙ্ক বাড়ছে গরু মালিক ও স্থানীয়দের মধ্যে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর থেকে বুধবার পর্যন্ত যারা চিকিৎসা নিয়েছেন তারা হলেন—বেলকা গ্রামের সামিউল ইসলাম, সাহাদৎ হোসেন, সবুজ মিয়া, বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আজিজল হক, পশ্চিম বেলকা গ্রামের ভূট্ট মিয়া, আতিকুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, বেলকা গ্রামের মোজাহার আলী, মোজাফ্ফর হোসেন, খতিব মিয়া, ফরিদুল হক, রুজিনা বেগম, কিসামত সদর গ্রামের মোজা মিয়া, মাহবুর রহমান, শাফিকুল ইসলাম, স্বাধীন মিয়া, সকিনা বেগম, তাইজল মিয়া, শিশু ছায়ফান, আফরিন বেগম, ছালদিয়া ইসলাম, ও রইসুল মিয়া। তাদের মধ্যে রুজিনা বেগম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এদের মধ্যে রোজিনা বেগম নামের এক নারী বিভিন্ন সমস্যাসহ অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
এদিকে বেলকার কিশামত সদর গ্রামের আক্রান্তদের কারও এক হাতে, কারও দুই হাতেই ফোসকা পড়েছে। এর মধ্যে শুধু মোজাফফর আলীর বাঁ চোখ গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছে। মোজাফফর আলী বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত জবাই করা গরুর মাংস কাটাকাটিতে অংশ নিয়েছিলাম। এর দুদিন পর বাঁ হাতে ও বাঁ চোখে ফোসকা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাই। সেখানে ভর্তি হতে চাইলে চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়ে বিদায় করে দেন। কোনো ওষুধ দেয়নি। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে এনে খাচ্ছি এবং বাড়িতে আছি। প্রতিদিন ১০০ টাকার ওষুধ লাগছে। এরপর শুক্রবার রংপুর থেকে গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে আসা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ মনজুরুল করিমের কাছে যায়। বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে। এখন একটু সুস্থ।’
একই কথা বলেন ওই গ্রামের নুরুন্নবী মিয়া ও নুর নাহার বেগম। তারা আরও বলেন, তাদের পক্ষে এত দামি ওষুধ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ওষুধের দাম অনুযায়ী ২০ দিনের জন্য প্রায় ৩ হাজার টাকার ওষুধ লাগবে। সরকারিভাবে ওষুধ সরবরাহের দাবি তাদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দিবাকর বসাক বলেন, অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছিল, তাদের মধ্যে কেউ গুরুতর ছিল না। বেশিরভাগ রোগী রাতে এসেছিল, সে কারণে তাদের ওষুধ দেওয়া সম্ভাব হয়নি। গত দুদিনে (সোম ও মঙ্গলবার) নতুন করে আরও ৬ জন চিকিৎসা নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জনের চিকিৎসা দেওয়া হলো।
তিনি আরও বলেন, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগীদের ১০ দিনের অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেওয়া হচ্ছে। অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে সুস্থ হওয়ার কথা। উপজেলায় একটি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার দে বলেন, গরু-ছাগলকে অ্যানথ্রাক্স রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সচেতনতায় উঠান বৈঠক, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। পরীক্ষা করে দুটি গরুর মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। ৬টি মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন।
এদিকে রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের একটি অনুসন্ধান দল মাঠে নেমেছে। মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রংপুরের কাউনিয়া ও পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত খামারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, অ্যানথ্রাক্স (Anthrax) হলো একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ, যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস (Bacillus anthracis) নামক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা সৃষ্ট হয়। এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অত্যন্ত মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি, যা সাধারণত ছাগল, গবাদি পশু, ভেড়া এবং ঘোড়াসহ প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং মানুষকেও সংক্রমিত করতে পারে।
মন্তব্য করুন