সৃষ্টিকর্তার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টির সমাহার পৃথিবীকে রঙিন ও প্রাণবন্ত করে রেখেছে। এসব সুন্দর সৃষ্টির মধ্যে অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টি গঙ্গাফড়িং কমন পিকচার উইং। এটির অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে মুগ্ধ করে সব বয়সি মানুষকে। ফড়িংটির ডানার নিখুঁত কারুকাজে চোখ আটকে যাবে যে কারোর। গঙ্গাফড়িংয়ের মোহনীয় সৌন্দর্যে সুন্দর প্রকৃতি যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।
গঙ্গাফড়িং কমন পিকচার উইং প্রকৃতিকে তার অপরূপ সৌন্দর্যে রাঙিয়ে তোলার এমনই এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার দীর্ঘভূমি এলাকার পুকুর পাড়সংলগ্ন এক ঝোপের পাশে। কয়েকটি কমন পিকচার উইং ঝোপ ঘিরে ওড়াউড়ি করছিল। মাঝে মাঝে বসছিল গাছের সরু ডালে, ঘাসে। প্রকৃতির দেওয়া এ সৌন্দর্য যেন চোখে লেগে থাকার মতোই সুন্দর। মনমাতানো দৃশ্য উপভোগেও যেন অন্যরকম তৃপ্তি আছে।
জানা গেছে, কমন পিকচার উইং ফড়িংয়ের বৈজ্ঞানিক নাম রাইওথেমিস ভ্যারিগাটা। এটি এক প্রকার ড্রাগনফ্লাই প্রজাতির ফড়িং। এরা লিবেলুলিডি পরিবারের অন্তর্গত এক ধরনের গঙ্গাফড়িং। এ ফড়িংয়ের আরও কিছু নাম রয়েছে, বৈচিত্র্যময় ফ্লাটারার, তিতলিপাখা। এটি মাঝারি আকারের ফড়িং। এ প্রজাতির পুরুষ ফড়িং থেকে স্ত্রী ফড়িং দেখতে কিছুটা ভিন্ন হয়। পুরুষ ফড়িং স্ত্রী ফড়িং থেকে অনেকটা বড় হয়ে থাকে। এ প্রজাতির ফড়িং সারাবছরই দেখা যায়।
পুরুষ ফড়িংয়ের ডানায় কালো রঙের মধ্যে হলদে ছোপ ও সোনালি আভা থাকে। স্ত্রী ফড়িংয়ের ক্ষেত্রে হলদে ছোপ বেশি থাকলেও সোনালি আভা থাকে না। এ প্রজাতির ফড়িংয়ের ডানার অগ্রভাগ স্বচ্ছ ও স্পষ্ট। ডানার সামনে ও মাঝে সবুজাভ রং থাকে। এদের চোখ চকচকে লালচে খয়েরি রঙের হয়। এরা ততটা দ্রুত গতির নয়, এরা দুর্বলভাবে উড়ে বেড়ায়। এরা দলবদ্ধভাবে একসঙ্গে কয়েকটি ফড়িং উড়ে বেড়ায়।
কমন পিকচার উইং সাধারণত জলাশয়ের কাছাকাছি স্থানে, জলাভূমি, ধানক্ষেত, পুকুর, ডোবার আশপাশে ওড়াউড়ি ও বসবাস করে। এরা বংশবিস্তার করতে জলাশয়ের কিনারে ডিম পাড়ে। এসব ডিম জলের ভেতরেই ফোটে। এ ফড়িংয়ের সঙ্গে তাদের বাচ্চাদের মিল থাকে না। তবে কয়েকবার খোলস পাল্টানোর পর বাচ্চারা একটি খোলসের মধ্যে পুত্তলি দশায় যায়। এসব পুত্তলি জলের কিনারার ঘাস বা আগাছার মধ্যে আটকে থাকে। এরপর একদিন পূর্ণাঙ্গ ফড়িং হয়ে পুত্তলি থেকে বেরিয়ে আসে।
গঙ্গাফড়িং কমন পিকচার উইং মানুষ ও প্রকৃতির জন্য উপকারী। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। এরা কৃষকদের বন্ধু। ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের সাহায্য করে। এরা ও এদের বাচ্চারা মশা ও মশার লার্ভা খায়। এ ছাড়া এরা মাছি, প্রজাপতির লার্ভা, ছোট আকারের প্রজাপতি, মথ, পাতাফড়িং, ঘাসফড়িংয়ের বাচ্চা ইত্যাদি শিকার করে থাকে। বিশেষ করে কমন পিকচার উইং ও এদের বাচ্চারা এডিস মশার লার্ভা বা বাচ্চা খেতে বেশি পছন্দ করে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, ফড়িং প্রকৃতির জন্য উপকারী প্রাণী। ছোট এ প্রাণীটি কৃষকদের আবাদ করা ফসলের মধ্য থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করে। যেসব এলাকায় ফড়িংয়ের উপস্থিতি বেশি সেসব এলাকার জমিতে কীটনাশকের ব্যবহারও কম হয়। তাই ফড়িংকে কৃষকদের বন্ধু বলা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ দেশে কয়েক প্রজাতির ফড়িং দেখা যায়। এদের মধ্যে গঙ্গাফড়িং কমন পিকচার উইং বেশ সুন্দর। এদের ডানা যেন শিল্পীর হাতে আঁকা ছবির মতো মনোমুগ্ধকর। এরা সাধারণত অন্য ফড়িংয়ের মতো চঞ্চল নয়। এরা পরিবেশে ও প্রকৃতির জন্য উপকারী।
মন্তব্য করুন