

২০২২ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত এক নিয়োগে তিনবার অ্যাডমিট কার্ড পেয়েছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা, আর তিনবারই ‘অনিবার্য কারণবশত’ নিয়োগটি স্থগিত হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায়। আর এ নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদ ও চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আসলে চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার ও প্রাথমিক শিক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য বৈশালি রায় দুজনের কেউ অফিসে না আসায় শিক্ষার্থীরা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও কোনো সাড়া পাননি শিক্ষার্থীরা। পরে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা জেলা পরিষদের প্রধান ফটকসহ ভবনের সকল ফটকে তালা ঝুলিয়ে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অরুদ্ধ রয়েছে।
পরীক্ষার্থী জিনেট চাকমা জানান, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিনবার একই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হলো। আমরা জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে স্মারকলিপি দিতে আসছিলাম। সকাল ৯টা থেকে আমরা অবস্থান করছি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে। কিন্তু সাড়ে ১০টার দিকে আমরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের রুমে স্মারকলিপি দিতে গেলে দেখি তিনি অফিসে আসেননি। আমরা বারবার উনার সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেছি তিনি ফোন কেটে দিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, জেলা পরিষদের প্রাথমিক শিক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত বৈশালি রায়ের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করেছি। তিনিও ফোন ধরছেন না। যার কারণে আমরা জেলা পরিষদে অবস্থান করছি এবং বিভিন্ন ফটকে তালা দিয়েছি। কেন এই পরীক্ষা স্থগিত হলো তার কারণ আমরা জানতে চাই এবং এই স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ৪৬২ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিষয় নিয়ে ২০২২ সালের ২৯ মে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে জেলা পরিষদ। সেই সময় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অংসুইপ্রু চৌধুরী। পরে একই চেয়ারম্যানের অধীনে ২০২৪ সালে ২৪ মে আবারও একই বিজ্ঞপ্তিটির লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার তিন দিন আগে সেই লিখিত পরীক্ষাও স্থগিত হয়ে যায়। এবারও ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত করে জেলা পরিষদ।
পরে ৫ আগস্টের পর জেলা পরিষদ পুনর্গঠন হয়। পুনর্গঠিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় এক বছর পর বিজ্ঞপ্তিটি আবারও প্রকাশ করে। সেই হিসেবে আগামী ১৪ নভেম্বর পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার ‘অনিবার্য’ কারণ দেখিয়ে তৃতীয়বারের মতো একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করলো জেলা পরিষদ। নিয়োগ স্থগিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চুক্তি অনুসারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিভাগ হিসেবে ন্যস্ত হওয়ায় এসব নিয়োগের দেখভাল পুরোটাই জেলা পরিষদ করে থাকে।
মন্তব্য করুন