

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাবার কোলে চড়ে ১৮ বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করা নাইছ খাতুন ওরফে হাসি অনার্স চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফলে দেখা যায় হাসি সিজিপিএ ৩ দশমিক ২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুটো পা আছে, তবে সেগুলোয় বল পান না হাসি। ডান হাতেও নেই শক্তি। সম্বল তার বাঁ হাত। সবসময় বাবার কোলে চড়েই তাকে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে হয়েছে। এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।
ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম নজরুল ইসলাম ও মায়ের নাম আকতার জাহান। দরিদ্র এই দম্পতির ঘরেই ২০০১ সালে জন্ম নেন হাসি।
হাসি ৬ বছর বয়সে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ৫ম শ্রেণির লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা উচ্চবিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে মানবিক শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় ৩ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট পেয়ে কৃতকার্য হন। এরপর ২০১৯ সালে বিশ্বহরিগাছা-বহালগাছা বহুমুখী মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ২ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট পেয়ে পাস করেছেন। এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ধুনট সরকারি ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে হাসি বাড়ি থেকে বাবার কোলে চড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেছেন।
হাসির বাবা নজরুল ইসলাম জানান, তার মেয়ে জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবে দূর থেকে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। দুটো পা, একটি হাত নিশ্চল। তাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না। শুধু বসা অবস্থায় বাঁ হাতটি দিয়ে কলম ধরে লিখতে পারে সে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে হাসি ছোট। শরীরের এই প্রতিবন্ধিতাকে হাসিমুখেই জয় করেছে মেয়েটি।
হাসি বলেন, শরীরে শক্তি নেই, তাই কী হবে? মনোবল আর এক হাতের শক্তি নিয়েই জীবন শুরু করেছি। আমি কারও মাথায় বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। বাবার কোলে চড়ে একসময় রাস্তায় বের হলে মানুষ আড় চোখে তাকিয়ে থাকত। লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালোবাসে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের সবার ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে নিজেকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত করতে চাই।
মন্তব্য করুন