মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি-নতুন মদনাডাঙ্গা সড়ক সংস্কার কাজে নজিরবিহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ উপকরণ পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সিডিউল অনুযায়ী কোনো কাজ করানো হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করাতে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন উদ্দীনের বিরুদ্ধে।
সড়ক কার্পেটিংয়ের পরপরই বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। রাস্তার দু’ধারে দেয়া হয়নি মাটি, অনেক স্থানে ভেঙে যাচ্ছে। এ ঘটনায় রাস্তা নিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। রাস্তা ভালোভাবে পরিষ্কার না করেই তার ওপর কার্পেটিং করা হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি-নতুন মদনাডাঙ্গা প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এই সড়ক সংস্কারে প্রাক্কলিত ব্যায় ধরা হয়েছে ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৬ টাকা। এর মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৫১৬ টাকা, মাটি ভরাটের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৩ টাকা, সোল্ডার বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২৯ টাকা, রিপিয়ার ফটোজ (গর্ত ভরাট) বাবদ ২ লাখ ১৪ হাজার ১১৫ টাকা, বেইজ টাইপ-২ (ফলস আইটেম) বাবদ ৪০ হাজার ৯১০ টাকা, (ভালো রাস্তা) কার্পেটিং বাবদ ১৮ লাখ ১ হাজার ৬১৭ টাকা, আরসিসি প্যালাইসাইটিং বাবদ ৩ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা ও সিলকোট ১২ মিটার বাবদ ৩৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯১৭ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টেন্ডারে ১২ মিলি সিলকোট দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দেওয়া হয়েছে ৬, ৭ ও ৮ মিলি। রাস্তার যেখানে মাটি সরে গেছে সেখানে মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। কিন্তু ঠিকাদার রাস্তার পাশের মাটি কেটেই ভরাট করছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। প্যালাসাইটিং দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ট্যাককোট ও রাস্তার দুপাশে এজিং দেওয়া হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী নয়, রাস্তাটির নির্মাণ করা হচ্ছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন উদ্দীনের ইচ্ছে মাফিক।
এ ছাড়া এখানে কোনো ওয়ার্ক অ্যাসিসটেন্টকে দিয়ে নয়, কাজের তদারকি করছেন অফিস সহায়ক সাইদুর রহমান ও মাপজোখের কাজ করছেন অবসরপ্রাপ্ত কার্যসহকারী মাশুকুর রহমান।
নতুন মদনাডাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বজলুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও ইউসুব আলী জানালেন, খুব অল্পদিন আগে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখনো এটি একদম ভালো রাস্তা। রাস্তাটির দুএক স্থানে মাটির কারণে ভেঙে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, সরকারি টাকা নয়ছয় করার জন্যই ভালো রাস্তার টেন্ডার করছেন কর্তৃপক্ষ। এখানে অর্ধেকের বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হতে পারে।
স্থানীয় অধিবাসী আব্দুর রহিম ও শের আলী জানান, কার্পেটিংয়ে নিম্নমাণের বিটুমিন ব্যবহার ও পরিমাণে কম দেওয়া হয়েছে। যেকারণে কার্পেটিং কাজের দুদিন পরেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। রাস্তাটির পাশে যেখানে মাটি লাগবে সেখানে মাটি ভরাট করা হচ্ছে না। এ ছাড়া সিডিউলে এজিং দেওয়ার কথা থাকলেও এজিং দেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে সম্প্রতি প্রায় ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে কার্যাদেশ পান আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড কনস্ট্রাকশন। সেখান থেকে কাজটি কিনে নেন গাংনী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিম বলেন, কাজে ব্যাপক ঘাপলা হয়েছে। কেউ প্রকাশ্যে এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী যেভাবে আমাকে কাজ করতে বলেছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহিন উদ্দীন বলেন, ‘কোনো অনিয়ম হয়নি। সিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন