৩৭ বছর পর এবার সিলেটের গোয়াইনঘাটের আলীরগাঁও ইউনিয়নের বাঘের সড়ক এলাকায় পাওয়া গেল জ্বালানি তেলের খনির সন্ধান। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ১০ নম্বর কূপ খনন করে প্রথম স্তরে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ ব্যারেল (১৫৯ লিটার) তেলের প্রবাহ পাওয়া গেছে। তেলের মজুতের তথ্য জানতে আরও অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া ওই কূপের তিনটি স্তরে নতুন গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। দুই মাস আগে এ কূপ খনন শুরু হয়।
সচিবালয়ে রোববার (১০ ডিসেম্বর) জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০ বছর এখান থেকে সুফল পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে সিলেট খনি থেকে উত্তোলিত তেল পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১৯৮৬ সালে দেশে প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায় হরিপুরে। এটি পাঁচ বছর স্থায়ী হয়েছিল। ওই সময় এপিআই গ্র্যাভিটি ২৭ ডিগ্রি। এবার সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের নতুন কূপে ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরতায় ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি জানা যায়। প্রাথমিকভাবে এপিআই গ্র্যাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিলেট ১০ নম্বর কূপ ২ হাজার ৫৭৬ মিটার গভীরতায় খনন সম্পন্ন করা হয়। এই কূপে ৪টি স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নিচের স্তরটি ২ হাজার ৫৪০ থেকে ২ হাজার ৫৫০ মিটার টেস্ট করে আড়াই কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রবাহ পাওয়া যায় এবং ফ্লোয়িং প্রেশার ৩ হাজার ২৫০ পিএসআই।
মজুতের পরিমাণ ৪৩ থেকে ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট। ২ হাজার ৪৬০ থেকে ২ হাজার ৪৭৫ মিটারে আরও একটি ভালো গ্যাসের স্তর পাওয়া যায়, এখানে টেস্ট করলে আড়াই থেকে তিন কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া ২ হাজার ২৯০ থেকে ২ হাজার ৩১০ মিটারে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
এতে আরও বলা হয়, ২ হাজার ৫৪০ এবং ২ হাজার ৪৬০ মিটার গভীরতায় একযোগে উৎপাদন করা হলে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর এটি অব্যাহত থাকবে এবং গড় ভারিত মূল্য হিসেবে এর মূল্য প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। যদি দিনে দুই কোটি ঘনফুট হারে উৎপাদন করা হয়, তাহলে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে গ্যাস উৎপাদন করা যাবে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রথম জ্বালানি তেল পাওয়া যায় হরিপুরে যা স্থায়ী হয়েছিল ৫ বছর। ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর জ্বালানি মন্ত্রী জানানোর পর এলাকায় আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে। এ ছাড়া সবাই বলছে, দীর্ঘ ৩৭ বছর পর আবারও জ্বালানি তেলের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে এবং প্রথম দিনেই প্রায় ৭০ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয় সেই তেল টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন