সময় তখন ৫টা ২০ মিনিট। শীতল হওয়ায় চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন। সমানে গর্জন দিচ্ছে ঢেউ। এরই মাঝে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেছে ২০২৩ সালের শেষ সূর্য। রেললাইন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিকেএসপি কক্সবাজার কেন্দ্রসহ ২০২৩ পুরো বছরই কক্সবাজারের জন্য প্রাপ্তির। এরই মাঝে ২০৪১ সালের ভিশন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন জাগিয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেল ২০২৩ সাল। প্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি ও নানা ঘটন-অঘটনকে চাপিয়ে শেষ হলো আরও একটি বছর। এবারও ‘থার্টিফাস্ট নাইট’ উদযাপনে দৃশ্যমান আয়োজন নেই কক্সবাজারে। ফলে উল্লেখ করার মতো পর্যটকের উপস্থিতি নেই। তবে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। সেন্টমার্টিনেও অবস্থান করছেন অনেক পর্যটক।
রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় উন্মুক্ত স্থানে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের সব ধরনের আয়োজন বন্ধ। তবে, অতীতের মতো তারকা হোটেলগুলো স্ব-উদ্যোগে হোটেলে অবস্থান করা অতিথিদের জন্য অভ্যন্তরীণ আয়োজন রেখেছে।
কক্সবাজার হোটেল সায়মনের হিসাবে শাখার সিনিয়র অফিসার আসাদুজ্জামান নুর বলেন, বাইরে উন্মুক্ত আয়োজন না থাকলেও পর্যটক চাহিদার কারণে ইনহাউস গেস্টদের জন্য আমরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।
কক্সবাজার হোটেলে মোটেল গোস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি ও তারকা হোটেলগুলো বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সে সময় কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হতো আমাদের। এমনকি অনেক পর্যটক পথে রাত কাটিয়েছেন। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমণের পর থার্টিফাস্ট নাইট উপলক্ষে সৈকতে উন্মুক্ত বা অভ্যন্তরে সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ায় কক্সবাজার বিমুখ হয়ে পড়ছে পর্যটকরা। ফলে কয়েক বছর ধরে লোকসান গুণতে হচ্ছে আমাদের।
এদিকে, বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম।
রোববার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা-লাবণী ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল দর্শনার্থী এসেছেন সৈকতে। শীতের মাঝেও অনেকে গোসল করছিলেন সমুদ্রে। অধিকাংশই বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, পেশাগত কারণে পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারি না। তাই বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে পরিবারসহ সৈকতে এসেছি।
চাকরির সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করায় বিগত বছরের ন্যায় এবারও বছরের শেষ সূর্যাস্থের সাক্ষী হতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বালিয়াড়িতে এসেছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা। ২০২৩ সালের বিদায়ী সূর্যাস্তের সাক্ষী হতে পারা উপভোগের বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, থার্টিফাস্ট উদযাপনে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা অযৌক্তিক। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টিফাস্টের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সৈকত কিংবা পর্যটন স্পটের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ডসংগীতের আয়োজন করা নিষেধ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগে বাধা নেই। পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে।
মন্তব্য করুন