ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় লাঞ্ছিত করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়ার ঘটনায় নিজ ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী তিন ছাত্রলীগ নেতা।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে ফেনীর একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করেন ফেনী জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছাগলনাইয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. আইয়ুব চৌধুরী, ছাগলনাইয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম শাকিল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন।
ছাত্রলীগ নেতা মো. আইয়ুব চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, গত ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বাদ আছর বাসায় নামাজ আদায় করে থানাপাড়া হক ম্যানশনের নিজ বাসা থেকে শহীদ আবদুর রাজ্জাক সড়ক হয়ে শুভপুর খামারের উদ্দেশে বের হই। এসময় আশরাফ উদ্দিন ও জহিরুল ইসলাম শাকিল আমার সঙ্গে ছিলেন। আমরা তিনজন শুভপুর সড়কে সিএনজি অটোরিকশার উদ্দেশ্যে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক সড়ক দিয়ে হেঁটে রওয়ানা দেই।
আপনারা জানেন, এর আগের রাতে থানা পাড়ায় একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ঘটনা সম্পর্কে আমরাও অবগত ছিলাম। আগের ঘটনাস্থলের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমরা দেখতে পাই ছাগলনাইয়া পৌরসভার মেয়র মো. মোস্তফা ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
সু-সম্পর্ক ও দলীয় লোক হওয়ায় মেয়রকে দেখে আমরা তিনজন সম্মানের সঙ্গে সালাম দিয়ে তার সামনে এগিয়ে যাই। তার সামনে যেতেই তিনি আমাদের দিকে তেড়ে আসেন এবং বলেন, ‘আজকে পাইছি তোদের’।
এরপর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মেয়র ও তার সঙ্গে থাকা লোকজন মারধর শুরু করে। এসময় মেয়র মোস্তফার কোমরে থাকা অস্ত্র বের করে অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় সজোরে আঘাত করেন। আমার সঙ্গে থাকা বন্ধু আশরাফের নাকের ওপর আঘাত করে। আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে আশরাফ মাটিতে পড়ে যায়। পরে তিনজনকে টেনেহিঁছড়ে জোর করে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন বদ্ধ ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের লাঠিসোঁটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও করার চেষ্টা করে।
পরে মেয়রের সঙ্গে থাকা অস্ত্রের বুলেট নিয়ে আসে। বুলেট ও ইয়াবা জোর জবরদস্তি করে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেগুলো মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। যার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আমার পকেটে থাকা খামারের গরু ও মুরগি বিক্রির আনুমানিক ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকাও জোরপূর্বক মেয়রের সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে যায়। এ ছাড়া আশরাফের সঙ্গে থাকা মোবাইল ও ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
একপর্যায়ে পূর্বের ঘটনার বাসার লোকজন আসে, তারা বলতে থাকে, ‘এই ছেলেগুলো না, অন্য ছেলেরা ছিল।’ মেয়র তখন চিৎকার করে বলে, ‘এরা না হলে নাই। এদের মেরে ফেলে দিব।’
এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে ও সেখান থেকে আমাদের তিনজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর মেয়র মো. মোস্তফার নির্দেশে একটি ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় আমাদের তিনজনকে আসামি করে পুলিশ আদালতে পাঠায়। পরে আমরা জামিনে মুক্ত হই।
মো. আইয়ুব চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। পাশাপাশি আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, ফেনী-১ আসনের এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ সবার কাছে বিচার প্রার্থনা করি।
এমতাবস্থায় আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন ও আমার ব্যবসায়িক ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ফেরত চাই। না হয় আমার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া মেয়র এম মোস্তফা ও তার বাহিনীর কাছ থেকে আমাদের তিনজন ও আমাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তফা বলেন, অভিযোগগুলো ডাহা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এই তিনজন প্রবাসীর বাড়িতে হামলা এবং চাঁদা চাইতে গিয়েছিল।
বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়রা তাদের ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আমার আত্মীয়ের বাড়ি কিন্তু আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। পুলিশ যাওয়ার পর আমি সেখানে গেছি।
মন্তব্য করুন