সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক কালবেলার মহেশখালী প্রতিনিধি রকিয়ত উল্লাহকে মারধর করা হয়েছে। এ সময় হাত-পা কেটে তাকে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি মশিউর রহমান (৩৯) নিজেকে মেজর পরিচয় দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘সুমিতমো’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন।
গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে সাংবাদিক রকিয়ত উল্লাহর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রকিয়ত উল্লাহ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল আসে। সেই কলের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে হুমকি ও গালাগাল করেন। পরে বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি দাবি করে স্থানীয় নুর হোসেন সোহেল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে আমার সঙ্গে ফের যোগাযোগ করা হয় এবং তা সমঝোতা করার কথা বলে আমাকে তাদের কর্মচারীদের কোয়ার্টারে নিয়ে যান।
রকিয়ত আরও বলেন, সেখানে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগে অভিযুক্ত গালাগাল শুরু করেন। একপর্যায়ে মারধর করতে থাকেন। কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে হাত-পা কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেন।
এ ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সাংবাদিক রকিয়ত। ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় দৈনিক দৈনন্দিন পত্রিকায় ‘চুক্তির মেয়াদ শেষ, জমিতে নির্মিত অবকাঠামো লুটপাট করতে মরিয়া রানা সিন্ডিকেট’ শিরোনাম প্রকাশিত সংবাদের জেরে এ হামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মহেশখালী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো. ইউনুস বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশে কোনো অসংগতি থাকলে অভিযুক্তরা দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা না করে সংবাদকর্মীকে হেনস্থা বা আটকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এটা সম্পূর্ণ আইনবিরোধী।’ সুমিতোমো কোম্পানির একজন সিকিউরিটি অফিসার কর্তৃক সাংবাদিকে হুমকি ও আটকিয়ে রাখার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণের দাবি জানান তিনি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলের হুঁশিয়ার দেন এ সাংবাদিক নেতা।
অভিযযোগের বিষয়ে জানতে সুমিতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প সুমিতোমোর কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার কাজী মহসিন বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। কোনো সিকিউরিটি অফিসার আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ব্যক্তিগত কাউকে হেনস্থা বা লাঞ্ছিত করার সুযোগ নেই। ঘটনার বিষয়টি যাচাইবাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সুমতোমো কোম্পানির সিকিউরিটি অফিসার মশিউরের সঙ্গে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধীনে অনেক কোম্পানি সাপ্লাই বা বিভিন্ন কাজ করে। হয়তো তাদের কোনো কর্মচারী হতে পারেন তিনি। তার দায়ভার আমরা নেব না।’ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, একটি সাধারণ ডায়েরি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন