জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

অনাবাদি পাহাড় এখন আয়ের উৎস, মিশ্র ফলের আবাদে বদলে গেছে ভাগ্য

বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত এক চাষি। ছবি : কালবেলা
বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত এক চাষি। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড়ে বেড়েছে মিশ্র ফলের আবাদ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে অন্তত শতাধিক পাহাড়ি কৃষি প্রজেক্ট। পাহাড় থেকে উৎপাদিত ফলমূল চলে যায় সারা দেশের বিভিন্ন বড় বড় বাজারে। তবে দুর্গম যোগাযোগব্যবস্থা, সেচ সুবিধাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাহাড়ে আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন উদ্যোক্তারা। এতে পাহাড়ে কৃষিবিপ্লব হবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।

সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ি ভূমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলমূল। দুর্গম এসব পাহাড়ে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ বাগান গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে নওশাদ করিমের আম বাগান প্রজেক্ট, মাওলানা আবদুর রহমানের আড়াই একর পাহাড়জুড়ে মিশ্র ফলফলাদি বাগান, ৭ একর পাহাড় ও সমতল ভূমিতে কৃষক আবুল সৈয়দের খেজুর ও তুলা বাগান, ৬ একরজুড়ে অধ্যাপক গফুর আহমদের মিশ্র ফলফলাদির বাগানসহ শুধু উত্তর রাঙ্গুনিয়াতেই বিভিন্ন পাহাড়ে অন্তত অর্ধশত পাহাড়ি কৃষি প্রজেক্ট গড়ে উঠেছে।

উত্তর রাঙ্গুনিয়া ধামইরহাট বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দুর্গম পথ পেরিয়ে পূর্ব নিশ্চিন্তাপুর হালদী ছড়া নামক স্থানে আবুল সৈয়দের কৃষি প্রজেক্ট। শুধু তিনিই নন, এই এলাকায় তার মতো আরও অন্তত ১০ জন উদ্যোক্তা একইভাবে কৃষি প্রজেক্ট গড়েছেন। কিন্তু সড়ক যোগাযোগ দুর্গম হওয়ায় তাদের কৃষি কাজে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সড়ক যোগাযোগ ভালো হলে আরও কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। একইভাবে লালানগরের ছনখোলাবিল এলাকাতেও দুর্গম যোগাযোগ সত্ত্বেও একাধিক বাণিজ্যিক কৃষি প্রজেক্ট গড়ে ওঠেছে।

উত্তর রাঙ্গুনিয়ার গফুর আহমেদ নামের একজন শিক্ষক গড়ে তুলেছেন বিষমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফলদ গাছের বাণিজ্যিক বাগান। শিক্ষকতার পাশাপাশি গেল ১০ বছর ধরে তিনি নিজ উদ্যোগে ৬ একর পাহাড়ি জমিতে গড়া এই বাগানে অন্তত ৫০ প্রকারের ফলদ গাছ রয়েছে। তার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের সোনারগাঁও গ্রামে। তার বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দুর্গম পাহাড়ের ভেতরে হাতি মারা নামক স্থানে বাগানটি গড়ে তুলেন।

সরেজমিনে তার বাগানে গেলে দেখা যায়, শিক্ষক আব্দুল গফুরের বাগানে রয়েছে- বানানা আম, বারি ১১, আম্রপালি, বারি ৪, বারি ১, থাই আম, হাড়ি ভাঙ্গা, রাঙ্গুই আম, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, মাল্টা, কমলা, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, আনারস, আমলকী, জামরুল, বরই, পেয়ারা, আতা, ডালিম, কামরাঙ্গা, জলপাই, নারিকেল, পিচফল, লেবু, পেঁপে, চেরিফল, বাতাবি লেবু, তেঁতুল, কাঠলিচু, তাল, বেল, আমড়া, বাউকুল, রেড, পিংক, হোয়াইট, তালসহ ৫০ প্রকারের ফলজ বাগান। এ ছাড়া বিদেশি ফলের মধ্যে ড্রাগন ফল, ত্বীনফল, আপেল, রামবুটান, নাশপাতি, এগফ্রুট (সাউথ আফ্রিকা), ডুরিয়ান (মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল), অ্যাভোকাডো, ম্যাংগোস্টিন, চায়না কমলা, চায়না লিচু, চায়না পেয়ারা, থাই পেয়ারা, কিং আম, ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই আম (থাইল্যান্ড), অ্যামেরিকান সুন্দরী আম। বারোমাসি বিভিন্ন ফলজ বাগানও রয়েছে তার বাগানে। এমনকি মসলা জাতীয় আবাদের মধ্যে সাদা এলাচ, কালো এলাচ, তেজপাতা, পোলাও পাতার আবাদ রয়েছে। ঔষধি গাছের মধ্যে কালোমেঘ, তুলসী, অ্যালোভেরা, কাঠগাছ- সেগুন, মেহগনি, জারুল, গামাই, পলাশ, একাশি। শৌখিন গাছের মধ্যে পান, সুপারি, বিভিন্ন ধরনের ফুল এবং বিভিন্ন ধরনের সবজির বাগানও রয়েছে তার বাগানে।

শিক্ষক গফুর আহমেদ জানান, সম্পূর্ণ শখের বসে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই বাগান গড়েছি। আর এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফল হয়েছেন। বাজারেও তার ফলের চাহিদা ব্যাপক। তবে সরকারিভাবে আরও সহযোগিতা পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যালমুক্ত ফলের বিস্তার ঘটাতে পারবেন বলে মনে করছেন সফল মিশ্র ফলচাষি গফুর আহমদ। তার বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন বলে তিনি জানান। তিনিও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, সেচ সুবিধার জন্য সরকারি সহায়তাসহ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও উদ্যোক্তা কৃষি প্রজেক্ট গড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠবেন বলে মত প্রকাশ করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠেছে একাধিক সফল বাণিজ্যিক কৃষি প্রজেক্ট। এসব কৃষি প্রজেক্টে সফল হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। এসব বাগানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক পাশে রয়েছে। তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নসহ নানা সমস্যা সমাধানে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা করে যাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সরাসরি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউট ও তদন্তকারী কর্মকর্তারা

জুলাই ঐক্যের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

এবার আসিফ ও মাহফুজের পদত্যাগ দাবি গণঅধিকার পরিষদের

শীতের শুরুতে স্থানীয় নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন

ডাকসুর রোডম্যাপ দাবিতে ৩২ ঘণ্টা ধরে অনশনে বিন ইয়ামিন

বই চুরির মামলায় অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার গ্রেপ্তার

বন্যা না আসতেই ধসে গেল নদী রক্ষা বাঁধ

বর্তমান পরিস্থিতিতে মির্জা গালিবের ৫ পরামর্শ

পাকিস্তানকে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করে দিচ্ছে চীন

১০

অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন, আতঙ্কে নদীপাড়ের মানুষ

১১

‘কুমির ডেকে আনছেন তা আপনাদেরই খাবে’

১২

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

১৩

চট্টগ্রাম রোটারেক্ট ক্লাবের সভাপতি রাহাত, সম্পাদক ফারহানুল

১৪

ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নেওয়া সেই ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করল সেনাবাহিনী

১৫

ব্যাংকে ব্যাংকে পুলিশ পাঠিয়ে ডলার বাজার নিয়ন্ত্রণ আর নয় : গভর্নর

১৬

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে : খেলাফত মজলিস

১৭

বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে আইসিসি

১৮

সহোদরের হাতে বড় ভাই খুন

১৯

পানি দেবেন না মোদি, কী করবে পাকিস্তান?

২০
X