শিশির খান, সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

চায়না দুয়ারির ফাঁদে অস্তিত্ব-সংকটে দেশীয় প্রজাতির মাছ

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পেতে রাখা চায়না দুয়ারি জাল। ছবি : কালবেলা
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পেতে রাখা চায়না দুয়ারি জাল। ছবি : কালবেলা

পদ্মা নদীঘেঁষা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার খাল, বিল ও কোলসহ বিভিন্ন নদীতে কারেন্ট জালের পাশাপাশি চায়না দুয়ারি নামের একপ্রকার ফাঁদ ব্যবহার করে মৎস্য সম্পদ ধ্বংস করে চলছে এক শ্রেণির অসাধু মাছ শিকারিরা।

চায়না দুয়ারিকে স্থানীয়ভাবে জাল বলা হলেও এটি মাছ ধরার বিশেষ একটি ফাঁদ। একে চায়না জাল, ম্যাজিক জাল ও ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। এ ফাঁদের কারণে জলাশয়গুলো দিন দিন মাছশূন্য হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের। মৎস্যবিশেষজ্ঞদের মতে, এটা চাঁই বা কারেন্ট জালের চেয়েও ভয়ংকর এক ফাঁদ।

জানা যায়, এই চায়না দুয়ারি দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ফুট লম্বা হয়। এই দুয়ারির দুই দিকে মুখ থাকার পাশাপাশি এক অভিনব পদ্ধতিতে প্রস্তুত করায় উজান ও ভাটি সব দিক থেকে মাছ ভেতরে ঢুকলে আর বের হতে পারে না। ঘন ফাঁসের এই দুয়ারিতে পোনা মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ আটকা পড়ায় ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ।

উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা মৎস্য দপ্তর হতে প্রায় এক-দুই কিলোমিটারের মধ্যেই লোহারটেক কোল ও পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে চায়না দুয়ারি দিয়ে নিধন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সারা বছরই বিভিন্ন স্থানে এই ফাঁদ দিয়ে মাছ শিকার করলেও বর্ষা মৌসুমে যেন অসাধু শিকারিরা মাছ ধরার মহোৎসবে নামে। জোয়ারের পানির সঙ্গে ডিমওয়ালা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খাল, বিলসহ বিভিন্ন স্থানে বংশ বিস্তারের জন্য আসার গতি পথে পাতা হচ্ছে এই ফাঁদ।

নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ নিধন বন্ধে কোন অভিযান না হওয়ায় এসব অসাধু মাছ শিকারিরা কার্যত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শিকারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে এই দুয়ারি চীন হতে আমদানি করা হতো বলে দামও ছিল চড়া। একেকটি দুয়ারি কিনতে প্রায় ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ পড়ত। বর্তমানে একই আদলে আমাদের দেশের বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে এই ফাঁদ। একেকটি দুয়ারির মূল্য আগের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এই ফাঁদ ব্যবহার করে নিধন করছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

এই ফাঁদের ব্যবহারের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘লোহার চিকন তার ও ঘন সুতা দিয়ে তৈরি এমন ফাঁদে নদী, নালা, খাল বিলের ডিমওয়ালা থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরা পড়ায় আমাদের মৎস্য সম্পদ এখন হুমকির মুখে পড়ছে। আমাদের লোকবলসংকটের কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিক নির্দেশনায় দ্রুত এই চায়না দুয়ারি বিনষ্টে আমরা অভিযানে নামব।

চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাউছার বলেন, পোনা মাছ বাজারে দেখে মনটা খারাপ হয়। এই নিষিদ্ধ ফাঁদ ব্যবহারকারীদের ধরতে আমরা স্থানীয় প্রশাসন দিয়ে মাঝে মাঝেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি। এরপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে ওই মাছের বংশ ধ্বংস করায় ব্যবহৃত ফাঁদ অনেক চড়া মূল্যে বিক্রয় করে।

মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ফয়সাল বিন করিম জানান, ‘আমি মাত্র কয়েক দিন এখানে যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উঠান বৈঠক করে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও অবৈধ চায়না দুয়ারী দিয়ে মাছ শিকারকারীদের সতর্ক করা হবে। পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ বন্ধ, ভোগান্তিতে ৪২ হাজার গ্রাহক

শিক্ষানীতি মানছেন না সিদ্ধিরগঞ্জের ৪ শিক্ষক

অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ, ভয়ে পালালেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

সিভাসুতে তিন কর্মকর্তার পদাবনতি

দেশের শত্রুরাই পিআর নির্বাচনের বিরোধিতা করতে পারে : চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা, দুটিতে লড়বেন ফয়জুল করীম

দুই সন্তানসহ গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা, দেবর নিখোঁজ

ওয়ার্ডপ্রেস কন্ট্রিবিউশনের গর্বিত মুখ বাংলাদেশের নাসিম

বরিশালে এনসিপির পদযাত্র‍ায় ২০ সহস্রাধিক জনতার জমায়াতের প্রস্তুতি

১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে নতুন করে লেখালেন স্টার্ক

১০

মালয়েশিয়ায় প্রবেশের সময় ৯৬ বাংলাদেশি আটক

১১

চেয়ারে শহীদদের স্বজনেরা, মেঝেতে বসেন ৫ উপদেষ্টা

১২

শ্যামলীতে ছিনতাইকারীদের একজন গ্রেপ্তার, মোটরসাইকেল জব্দ

১৩

নারীদের বীরত্বপূর্ণ অবদানে জুলাই উইমেন্স ডে উদযাপন

১৪

এসএসসি-এইচএসসিতে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর

১৫

মাকে জীবনের জন্য হুমকি দাবি, বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ছেলে 

১৬

চরমোনাইর দরবারে এনসিপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

১৭

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল 

১৮

বাড়ির পেছনে পড়ে ছিল শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ

১৯

আশুলিয়া কলেজ প্রশাসনের ভুলে বিপাকে ১৮৬ এইচএসসি পরীক্ষার্থী

২০
X