রমজানের ২১ রোজা শেষ। সামনেই ঈদ। ঈদের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রাণিজ আমিষ বা মাংসের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার হাট-বাজারে আবারও বাড়ছে গরু, খাসি ও মুরগির দাম। কেজিপ্রতি দেশি মুরগির দাম ছাড়িয়েছে ৫৫০ টাকার উপরে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম, তাই বাড়ছে মাংসের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকার বেশি। এ ছাড়া আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, চাল, ডাল, আলু, সুজি, চিনি ও লবণসহ প্রভৃতি নিত্যপণ্যের দামও উচ্চমূল্যে স্থির হয়ে আছে। অথচ নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখতে সরকার বেশকিছু উদ্যোগ নিলেও সুফল মিলছে না বাজারে। গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মাংসসহ ২৯টি পণ্যের খুচরা মূল্য বেঁধে দেয়। দাম বেঁধে দেওয়ার দুই সপ্তাহ পরও এসব পণ্যের অধিকাংশই বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
সোমবার (১ এপ্রিল) উপজেলার ডিমলা সদর, নাউতারা, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি, ডালিয়া নতুন বাজার, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, বালাপাড়া, টেপাখরিবাড়ি ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে নিত্যপণ্যের অস্থিরতা যেন থামছেই না। সবজি ছাড়া ঊর্ধ্বমুখী প্রায় সব পণ্যের দাম। এর প্রভাবে বাজারে বাড়ছে মাংসের দামও। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শুধু দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ৫০-৮০ টাকার উপরে। আর ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত।
বর্তমান সময়ে বাজারে কেজিপ্রতি দেশি মুরগি ৫৫০-৫৬০, ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০, সোনালি মুরগি ২৫০-২৭০, সাদা লেয়ার ২০০-২২০, লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩১০, প্যানেল মুরগি ৩৫০-৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রকারভেদে ১টি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭৫০ টাকা করে। মুরগির বিক্রেতারা জানান, বাজারে সরবরাহ অনেক কমে গেছে। আর এতে বাড়ছে দাম। গয়াবাড়ি ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারের মুরগি বিক্রেতা লেবু মিয়া বলেন, পাইকারি পর্যায়ে বেড়েছে মুরগির দাম। তাছাড়া সরবরাহও কম। যার প্রভাব পড়ছে এ বাজারেও।
স্থানীয় ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ী বুলু মিয়া বলেন, এ এলাকায় আমাদের মুরগি সরবরাহ করেন কাজী, নারিশ, সিপি, প্যারাগন ও নীলসাগরসহ আরও কয়েকটি পোল্ট্রি ফার্মস। উনারাই মুরগির দাম ইচ্ছামতো কমবেশি করেন। এখানে আমাদের কোনো হাত নাই। বেশি দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করি। কম দাম পেলে কম দামে বিক্রি করব।
অপর মুরগি বিক্রেতা রাশেদুজ্জামান বললেন, বাজারে দেশি মুরগির সরবরাহ একেবারেই কম, নাই বললেই চলে। যার ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
তবে মুরগি কিনতে আসা ওমর আলী বলেন, ব্যবসায়ীগণ সিন্ডিকেট করে দেশি মুরগির দাম বাড়িয়েছে। দেশি মুরগির ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয় না। অসাধু ব্যবসায়ীগণ সংকর জাতের বিভিন্ন মুরগিকে দেশি মুরগি বলে বিক্রি করছেন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণের মতে, খামারিদের মুরগির খাদ্য ও বাচ্চার দাম বাড়ার কারণে বাড়ছে মুরগির দাম। এ দাম সহনশীল পর্যায়ে আনতে হলে মুরগির বাচ্চা, পোল্ট্রির খাবার ও আনুষঙ্গিক পণ্যের দাম কমাতে হবে। আর এ পোল্ট্রি খাত সম্পূর্ণ সিন্ডিকেটমুক্ত করে ক্ষুদ্র খামারিদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখীর এ বাজারে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে গরু ও খাসির মাংস স্বাদ ও সাধ্যের বাইরে। ইতোমধ্যে মাস দু'য়েকের ব্যবধানে কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কেজিপ্রতি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭২৫ টাকায়। বাজারে কেজিপ্রতি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০৫০ টাকায় ও ছাগলের মাংস ৮০০-৮৫০ টাকায়। যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বাজারের মাংস বিক্রেতারা জানান, ভারতীয় গরুর আমদানি না হলে মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা নাই। আরও বাড়তে পারে মাংসের দাম। ভারতীয় গরু না আসায় দেশীয় গরুর দাম বেড়েছে। তাই মাংসের দামও বাড়তি। যারা কম দামে মাংস বিক্রি করেছে এতদিন। তারাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাধারণ ক্রেতাদের ভাষ্যমতে, নিয়ন্ত্রণহীন এ বাজারে উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি ও বাজার মনিটরিং না থাকায় এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে। যথাযথ বাজার মনিটরিং করা হলে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকত বলে মনে করেন তারা।
গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ, ছোলা, আলু, কাঁচামরিচ, শুকনো মরিচ, রসুন, আদা, খেজুর ও কলা বিভিন্ন ধরনের ডাল, কাঁচা বাজার যেমন শাকসবজি, মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও ব্রয়লার মুরগিসহ ২৯টি পণ্যের দাম বিক্রির জন্য বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
মন্তব্য করুন