তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তেঁতুলিয়ায় নেমে গেছে পানির স্তর, চরম সংকটে কয়েক গ্রামবাসী

তেঁতুলিয়ায় ভূগর্ভস্থে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পানি। ছবি : কালবেলা
তেঁতুলিয়ায় ভূগর্ভস্থে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে মিলছে না পানি। ছবি : কালবেলা

চলমান দাবদাহে ভূগর্ভস্থে নেমে গেছে পানির স্তর। এতে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বেশকিছু এলাকার নলকূপগুলোতে মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও এ সংকট দেখা গেছে। সুপেয় পানিসহ দৈনন্দিন পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশকিছু এলাকায় হস্তচালিত নলকূগুলো ৬০ থেকে ৮০ ফুট পর্যন্ত বডিং করা করা হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাস আসলে নলকূপ তথা টিউবওয়েলগুলোতে খরা মৌসুমে অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যায় পানির স্তর। প্রতি বছর তীব্র তাপপ্রবাহে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করে উপজেলার সিদ্দিকনগর, মমিনপাড়া, দর্জিপাড়া, কানকাটা, সাহেবজোত, শারিয়ালজোতসহ বেশ কিছু এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি ওঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানা গেছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাদের (সাবমার্সিবল পাম্প) কেনার মতো সামর্থ্য নেই- এমন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় বর্তমানে ১০ হাজার ৭৫০টি টিউবওয়েল চালু রয়েছে। সাবমার্সিবলযুক্ত টিউবওয়েল (উচ্চ জলাধারসহ) রয়েছে ৯০টি। তবে সাধারণ টিউবওয়েলের হিসাব পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, খরা মৌসুমে এখানকার নদীগুলোতে পানি নেই। শুকিয়ে গেছে পুকুরের পানিও। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া সদরের দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়াল জোত, ডাঙ্গীবস্তি, সিদ্দিকনগর ও শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ এলাকাসহ বেশকিছু জায়গা উঁচু হওয়ায় গ্রীষ্ম মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে করে অচল হয়ে পড়ে নলকূপ। সংকট দেখা দেয় পানির। হাজারও পরিবারে পানি সংকটে সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি। পানির জন্য ছুটতে হচ্ছে পাশের বাড়িতে।

চৈত্র-বৈশাখের কাঠফাটা রোদে মাঠ, ঘাট, পথ, খাল, বিল ও প্রান্তর ফেটে চৌচির। বৃষ্টির অভাবে ফসলি ক্ষেতও ক্ষতির সম্মুখীন। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। এতে খরতাপে হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ ও প্রাণিকুল।

সিদ্দিক নগরের নুরনেহার, জাহানারা ও শহিদাসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুই মাস ধরে ঠিকমতো টিউবওয়েলের পানি উঠছে না। পাম্প বসিয়েও কোনো সুফল মিলছে না। যারা মাটির গভীরে বডিং করে পাম্প বসিয়েছেন, তারা কিছুটা রক্ষা পাচ্ছেন। তাদের বাড়ি থেকে পানি আনতে গেলেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা পানি দিতে চাচ্ছেন না। কাপড়, থালাবাসন ধোয়া ও রান্নাবান্না করতে যেটুকু দরকার তাও মিলছে না।

তেঁতুলিয়া সদরের মমিনপাড়া গ্রামের বানু আক্তার বলেন, এই সময়টাতে পানি পান না তারা। লেয়ার কমে যাওয়ার ফলে অন্য জায়গা থেকেপানি সংগ্রহ করে চলছেন। এতে করে বিপদে পড়ছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, যাদের সামান্য সামর্থ্য রয়েছে তারা টিউবওয়েলের সঙ্গে মোটরপাম্প সেট করলেও পানি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পাইপের কাছে ১০ ফিট গভীরে গর্ত করে মোটরপাম্প বসিয়ে নিচ্ছেন। তবে যাদের এ খরচ করার সামর্থ্য নেই তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

নলকূপ মিস্ত্রি তরিকুল ইসলাম বলেন, তেঁতুলিয়ায় বেশ কয়েকটি এলাকায় এ সময়ে পানির সংকট দেখা দেয়। টিউবওয়েল কাজে আসে না। আমরা সর্বোচ্চ এখানে ৭০-৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ বসিয়ে নলকূপ স্থাপন করে থাকি। তারপরেও জানুয়ারি থেকেই পানির লেয়ার নামতে শুরু করে। ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত পানির লেয়ার নিচে নিচে নেমে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে সাধারণত হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। যাদের অর্থ আছে, তারা সাবমারসিবল বসাচ্ছেন। অসহায়-গরিবদের জন্য খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে চৌচির হয়ে ফেটে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত। পানি নিম্নস্তরে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, অগভীর নলকূপ (শ্যালো মেশিন) দিয়ে পানি কম উঠছে। ৮-১০ ফুট গর্ত খুঁড়ে শ্যালো মেশিনগুলো সেখানে বসানো হচ্ছে। ইঞ্জিন গর্তে বসানোর পরেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়ছে না। কম পানি উঠছে। এতে করে বোরো আবাদসহ অন্যান্য আবাদেও সেচ খরচ অনেকগুণে বেড়েছে।

তেঁতুলিয়ার সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে পানির সমস্যা দেখা দেয়। এ জন্য আমরাও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে এ সমস্যা উত্তরণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি।

তেঁতুলিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মিঠুন কুমার রায় বলেন, এ সময়ে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। গত বছর আমরা সিদ্দিকনগর এলাকায় সার্ভে করেছিলাম, তখন পানির প্রথম লেয়ার ২০ ফুট নিচে নেমে যেতে দেখেছিলাম। বিশেষ করে বরেন্দ্রসহ অনেক গভীর নলকূপ স্থাপন হওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠে না। এখন পানির স্তর ৩০-৩৫ ফুট নিচে নেমে গেছে। এতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পপুলার ফার্মায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

পুতিন-মোদি বৈঠক, পারস্পরিক সাহায্যে জোর

বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত, খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

২৩ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি 

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

‘সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করা হবে’

ইউএনএফপিএ এবং জাপান সরকারের মাঝে ৪০ কোটি টাকার সহায়তা চুক্তি

১০

‘রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে কোনো চক্রান্ত করার সুযোগ দেওয়া হবে না’

১১

বুলগেরিয়ায় পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর

১২

ভিনির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে রিয়ালের অসাধারণ জয়

১৩

ঘূর্ণিঝড় ডানার তাণ্ডব চলবে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত

১৪

টানা দ্বিতীয় হারে এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়

১৫

বঙ্গভবন এলাকা থেকে আন্দোলনকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান হাসনাত-সারজিসের

১৬

বাংলাদেশ সিরিজের জন্য আফগানিস্তানের দল ঘোষণা

১৭

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব হলেন মোজাম্মেল হক

১৮

প্রধান উপদেষ্টা সুস্থ আছেন, গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ

১৯

যুক্তরাজ্য বিএনপির সম্পাদক কয়ছরকে জগন্নাথপুরে গণসংবর্ধনা

২০
X