উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলের পাটক্ষেত

তীব্র গরমে পুড়ছে কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলের পাটক্ষেত। ছবি : কালবেলা
তীব্র গরমে পুড়ছে কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলের পাটক্ষেত। ছবি : কালবেলা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রচণ্ড খরা, তীব্র তাপপ্রবাহে আর অনাবৃষ্টির কারণে পুড়ছে তিস্তার চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমির পাটক্ষেত। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপজেলার তাপমাত্রা ৩৭.৭ থেকে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদ ও অনাবৃষ্টিতে পাটের ক্ষেত শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানি ও সেচ দিতে না পারায় পাট গাছের সঠিক বৃদ্ধি হচ্ছে না ও পাট গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে চাষ করা পাট নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, গত বছর তিস্তা নদীতে দ্বিতীয় দফা বন্যায় ভারত থেকে পানির সঙ্গে কাদাপানি আসার ফলে তিস্তা নদীর বালু মাটিতে পলি জমেছে। ফলে এসব জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন চরাঞ্চলের চাষিরা। উপজেলার বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়ন তিস্তা নদী দ্বারা বেষ্টিত। গোড়াই পিয়ার, রামনিয়াশা, হোকডাঙ্গা, টিটমা, নাগড়াকুড়া, দড়িকিশোরপুর, মধ্য গোড়াই, কদমতলা, অজুর্ন, বিরহিম, সন্তোষ অভিরাম, সাদুয়া দামারহাট, কর্পূরা, খারিজা লাটশালাসহ অসংখ্য চরে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচণ্ড খরায় জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। পাট গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তপ্ত রোদ থেকে সোনালি আঁশ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন কৃষক। সেচ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না চরাঞ্চলের চাষিরা। কেউ পাটক্ষেতে নিড়ানি দিচ্ছেন, আবার কেউ সেচ দেওয়ার পরে জমিতে সার দিচ্ছেন। চরাঞ্চলের জমিগুলোতে কিছু কিছু পাট গাছ দেখা গেলেও বেশিরভাগ জমিতে নেই পাট গাছ। চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এসব চাষিরা। তারা জানান, অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে পাটক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। সেচ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না পাটক্ষেত।

তিস্তার চরাঞ্চলের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার পাট চাষি শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, প্রচন্ড গরমে জমিতে সেচ দেওয়ার পরেও পাটের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। মাটিতে কোনো রস থাকছে না। সেচ দিতে খরচও বাড়ছে, আবার মাটি ভিজা থাকছে না। একই জমিতে দুবার পাট চাষ করেও পাটক্ষেত টিকিয়ে রাখতে পারিনি। দুবার পাট চাষ করে খরচ হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। ঋণ করে পাট চাষ করেছি এখন ঋণ শোধ করব কীভাবে চিন্তায় পড়েছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে সংসারের খরচ চালাব।

তিস্তার চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার পাটচাষিদের মধ্যে রবিউল ইসলাম, বকুল মিয়া, চাঁদ মিয়া, রফিকুল ইসলাম, এমদাদুল হক, মোহাম্মদ আলী, আশরাফুল হক, আনারুল ইসলাম ও আব্দুল গনিসহ অনেকে বলেন, তিস্তার চরে জমিতে পাট লাগিয়েছি। প্রথমেই বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রচণ্ড গরমে পাট গাছ উঠেনি। পরে আবারো জমি চাষ করে পাট লাগিয়েছি। এবার পাট গাছ উঠলেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাট বাড়ছে না এবং প্রচণ্ড গরমে পাট গাছ মরে যাচ্ছে। প্রতিদিন পাটক্ষেতে অনেক টাকা খরচ করে সেচ দিয়ে পানি দেওয়ার পরও পাট টিকিয়ে রাখতে পারিনি। আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তা আর দুর্ভোগে চরাঞ্চলের কৃষকরা। শুধু পাট আবাদ নয়, বিভিন্ন জাতের সবজি চাষে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বর্তমান উপজেলায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এখন যে কোনো ফসলি জমিতে প্রচুর পরিমাণ সেচ প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া তিস্তার চরাঞ্চলের জমিগুলো বালু দ্বারা বেষ্টিত। সেচের পানি প্রয়োগ করলে সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যায়। ফলে পাট ক্ষেতের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এজন্য চরাঞ্চলে যে কোনো ফসলি জমিতে প্রচুর পরিমাণ সেচ প্রয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি।

এ দিকে জেলার রাজারহাট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। কুড়িগ্রাম জেলায় ৩৮.৪ থেকে ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। এ মাসে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এপ্রিল মাসজুড়ে উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ড / পালিয়ে থাকা নানক ও আজম ইমেইলে সাক্ষ্য দিয়েছেন : তদন্ত কমিশন

বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ২২ লাখ টাকার মালপত্র লুট

এনসিপি নেতা ও তার স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

স্কুলশিক্ষকের স্বপ্নের গোলের বোকাকে স্তব্ধ করল অকল্যান্ড!

প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকায় জীববৈচিত্র ধ্বংসের মুখে : প্রধান উপদেষ্টা

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ চলছে

নিউইয়র্কের মেয়র পদে মুসলমান প্রার্থীর ঐতিহাসিক জয়

তুরাগ নদের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুরতা আর কতদিন?

জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির

গুম সংক্রান্ত কমিশনের প্রতিবেদন / ২ জনকে হত্যার অপারেশনের টাকা গ্রামের মসজিদে দান করেন র‍্যাব কর্মকর্তা

১০

দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে প্রকৌশলী-কলেজছাত্র নিহত

১১

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াল ভারত-চীন-রাশিয়া জোট

১২

স্মার্ট লেনদেনে এক ধাপ এগিয়ে গুগল ওয়ালেট, কী পাচ্ছেন গ্রাহকরা?

১৩

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধিদল

১৪

বইয়ের সঙ্গে গাছ উপহার, জাতীয় পরিবেশ পদক পাচ্ছেন মাহমুদুল

১৫

মেলার স্টলে আ.লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, নারী নেত্রী আটক

১৬

সেনাবাহিনীর অভিযান / সাবেক সিইসি নুরুল হুদার সঙ্গে মবকাণ্ডে জড়িত গ্রেপ্তার ১

১৭

কোচিং থেকে বাড়ি ফেরা হলো না হৃদয়ের

১৮

ইতিহাসের ব্যয়বহুল ন্যাটো সম্মেলন : মিনিটে ব্যয় সোয়া ১৪ কোটি টাকা

১৯

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষা হবে পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচিতে

২০
X