হুমায়ুন কবির, সাভার
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম
আপডেট : ২৭ মে ২০২৪, ১১:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশ-আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় সাভারে কারখানা দখল

সাভারে কারখানার সামনে ভিড়। ছবি : কালবেলা
সাভারে কারখানার সামনে ভিড়। ছবি : কালবেলা

পুলিশ এবং কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার প্রত্যক্ষ মদদে সাভারে দিনদুপুরে একটি কারখানা দখলের অভিযোগ উঠেছে। আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার পরও বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড নামে ওই প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেয় সি পার্ল গ্রুপ। দখলের সময় ভুক্তভোগীরা পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা ছিল নিশ্চুপ।

পুলিশের সামনেই সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায় দখলকারীরা। এ সময় তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও মারধর করে দখলকারীরা।

সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুরে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড কারখানায় গত রোববার এমন ঘটনা ঘটে। কারখানা দখলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন সাভারে কর্মরত দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা ও বেসরকারি নাগরিক টেলিভিশনের প্রতিনিধি আকলাকুর রহমান আকাশ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারখানা থেকে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অফিসের বেশকিছু কম্পিউটারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালপত্র। এ সময় কোম্পানির পরিচালকের কক্ষে থাকা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দেবতা গণেশের মূর্তিও ভাঙচুর করা হয়। কারখানাটি দখল করতে আসা তিন শতাধিক লোকের বেশিরভাগই স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুসারী বলে জানা গেছে।

বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অভিজিৎ কুমার রায় কালবেলাকে বলেন, জোর করে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি সি পার্ল গ্রুপ দখল করে নিয়েছে। বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড মোটা অঙ্কের দায় মাথায় নিয়ে ২০০৭ সালে বন্ধ হয়। এরপর আমরা একটি চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ স্পন্সর শেয়ার কিনে এজিএমের মাধ্যমে কোম্পানি পরিচালনার দায়িত্ব নিই। এরপর কিছু সমস্যা থাকলেও কারখানাটিতে ২০১৯ সালে কার্যক্রম শুরু করা হয়।

অভিজিৎ অভিযোগ করেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ কয়েকশ সন্ত্রাসী নিয়ে সি পার্ল গ্রুপের কর্মকর্তারা কারখানা দখল করে নেয়। তারা আমাদের সব নিরাপত্তারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বের করে দেয়। অভিজিৎ রায় জানান, এর আগে ২০১৬ সালে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে আগের মালিকপক্ষ কোম্পানির মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলা করে। ওই মামলায় তার বাবা বিশ্বজিৎ কুমারকেই কারখানা পরিচালনার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ওই মামলা এখনো নিম্ন আদালতে চলমান। এরই মধ্যে গত বছর আগের মালিকপক্ষ বিক্রীত শেয়ার আবার সি পার্ল গ্রুপের মালিকপক্ষের কাছে বিক্রি করে। শেয়ার কেনার পর সি পার্ল গ্রুপের লোকজন একাধিকবার কারখানাটি দখলের চেষ্টা করে। দখল ঠেকাতে এবং আইনি সহায়তা পেতে অভিজিৎ রায় আদালতের মাধ্যমে ১৪৫ ধারার আদেশ আনেন। আদালতের ওই আদেশ উপেক্ষা করেই রোববার কারখানাটি দখল করে সি পার্ল গ্রুপের লোকজন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ একাধিকবার বিষয়টি সাভার মডেল থানা পুলিশকে জানিয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। জানা যায়, কারখানার জটিলতা নিরসনে জাতীয় সংসদ ভবনের একটি কক্ষে দুজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। এতে ঢাকা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। ওই আলোচনায় অভিজিৎ রায় উপস্থিত সবাইকে আদালতের নির্দেশনা এবং সব কাগজপত্র অনুসারে যে সিদ্ধান্ত হবে, সেটি তিনি মেনে নেবেন বলে জানান। তবে পরবর্তী সময়ে ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে ফের আলোচনা এবং কাগজপত্র যাচাইবাছাই করার কথা থাকলেও বিষয়টি আর এগোয়নি। এর মধ্যে রোববার কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার প্রত্যক্ষ মদদে হামলা এবং মারধর করে দখলে নেওয়া হয় কারখানা।

এদিকে রোববার সকালে কারখানা দখলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহের জন্য যান সাংবাদিক আকলাকুর রহমান আকাশ। ঘটনাস্থলের ছবি তোলার সময় সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে অন্য সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আকলাকুরের বাঁ চোখ ও মুখের বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে।

সাংবাদিক আকলাকুর রহমান আকাশ বলেন, ওই কারখানায় বহিরাগতরা ঢুকে সিসিটিভিসহ সবকিছু ভাঙচুর করছে, এমন তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। দেখতে পাই কিছু ছেলে ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, হার্ডডিস্ক ভাংচুর করছে। অনেকেই কারখানার নানা যন্ত্রাংশ নিয়ে যাচ্ছে। আমি সেখানকার দুটি ছবি তুলি। এর মধ্যে একজন আমাকে ছবি তুলতে দেখে কাছে এসে বলে, এই ছবি তুলস কেন, মোবাইল দে, এটা বলেই হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এরপর অতর্কিতভাবে যে যেভাবে পারে আমাকে পেটাচ্ছিল। আমার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকের ছবি পাওয়া যাবে। আমার ওপর হামলার ঘটনায় সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

এসব বিষয়ে জানতে বেঙ্গল ফাইন সিরামিক কারখানায় গিয়ে সি পার্ল গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তারা কথা বলতে রাজি হয়নি।

আদালতের স্থিতাবস্থা উপেক্ষা করে কারখানা দখল ও সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ওসি শাহ জামান কালবেলাকে বলেন, সাংবাদিকের ওপর হাত তোলা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অজ্ঞাত আসামি করে আহত সাংবাদিক আকাশ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।

পুলিশের নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে কারখানা দখলের ঘটনা ঘটেনি। ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে, আমি নিজেও গিয়েছি। সেখানে গিয়ে সংক্ষুব্ধ কাউকে পাইনি। এ ঘটনায় কারখানা মালিকদের উভয়পক্ষের কেউ এখন পর্যন্ত থানায় এসে অভিযোগ করেনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দেশকে আগের মতো ভিক্ষুকের জাতি বানাতেই এমন সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী

রাজবাড়ীতে ভাড়ায়চালিত বাইকারের বিরুদ্ধে যাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ

সরবরাহ সচল হওয়ায় স্বস্তি ফিরছে ব্রাহ্মণপাড়ার সবজি বাজারে

আজ কোন এলাকায় কত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল

রিয়ালের জার্সিতে কবে মাঠে নামছেন এমবাপ্পে?

স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা

অলিম্পিকে পদকের লড়াই হবে যে ইভেন্টগুলোতে (২৭ জুলাই)

দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে নতুন ছক সৌদির

রাশিয়ার সাবেক উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্রেপ্তার

ইসরায়েল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে?

১০

মানামার বাতাসে দূষণ সবচেয়ে বেশি, ঢাকার পরিস্থিতি কী

১১

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বর্জ্যে দুর্ভোগে ৩ লাখ মানুষ

১২

স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

১৩

অলিম্পিকে নিষিদ্ধ ছিল যে দেশগুলো

১৪

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা

১৫

উদ্বোধনীতে অ্যাথলেটদের চেয়ে বেশি উৎফুল্ল বাংলাদেশের কর্তারা

১৬

কুষ্টিয়ায় নাশকতা মামলায় আ.লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার

১৭

৬ দিন পর বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু

১৮

ভেজানো ছোলা খাওয়ার উপকারিতা

১৯

হামলা মামলা ও লাঞ্ছনার শিকার লালমনিরহাটের ৬ সাংবাদিক

২০
X