প্রথমে বাগান থেকে কাটা হয় শক্ত বাঁশ। তারপর ভালোভাবে কেটে খন্ড খণ্ড টুকরো করা হয়। টুকরোগুলোকে আবার ধারালো দা দিয়ে কাটা হয়। পরে আবার ছোট ছোট টুকরোগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন আকার দেওয়া হয়।
এক পর্যায়ে সবাই মিলে বসে পড়েন বাঁশের শলা নিয়ে। কেউ বাঁশের শলাকা তৈরিতে ব্যস্ত, কেউ আবার তা বুনন করতে ব্যস্ত। নিপুঁন হাতে সুতোর গাথুঁনীতে ফুঁটে ওঠে আবহমান গ্রাম বাংলার খাল-বিল, নদী-নালায় মাছ ধরার জন্য তৈরি বাঁশের শলাকা।
বাঁশের ওই শলা দিয়ে তৈরি করা হয় এক প্রকার বিশেষ যন্ত্র বা চাঁই। স্থানীয় ভাষায় একে দারকি বলা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় এটি ভিন্ন ভিন্ন নামেও পরিচিতি রয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে বাঁশের শলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চাঁই তৈরি করা হয়। এতে থাকে বিভিন্ন আকৃতির খোপ। এতে মাছ ঢোকানোর কৌশল আছে, কিন্তু বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। গ্রামাঞ্চলে বর্ষাকালে বন্যার সময় লোকজন মাছ ধরার ফাঁদ পাতেন। সেই ফাঁদগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারকি।
দারকি তৈরির এমন কর্মযজ্ঞের দেখা মিলবে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার পৌর শহরের দরিয়াবাদ ও মেলান্দহ উপজেলার বীর হাতিজা গ্রামে। এসব গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের জীবন জীবিকার এক মাত্র ভরসা দারকি বুনন ও বিক্রির ওপর। গ্রামের সব বয়সের মানুষ সারাদিন দারকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটায়। ফলে গ্রাম দুটি দারকি গ্রাম নামে পরিচিত লাভ করেছে।
সেখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়ি যেন দারকি তৈরির কারখানা। আর এই দারকি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। যদিও আধুনিক মাছ শিকারের বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে বর্তমানে শিল্পটি নানা সমস্যা জর্জরিত। একদিকে পুঁজি সংকট অন্যদিকে বৃদ্ধি পেয়েছে চায়না রিং জালের ব্যবহার। ফলে এ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
এদিকে চায়না রিং জালের ব্যবহার রোধসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, দারকি তৈরির কারিগরদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
মাছ ও বাঙালি একে অন্যের পরিপূরক। মাছ নিয়ে বাঙালির মনের কোণে আছে তীব্র আবেগ ও ভালোবাসা। তাই তো বলা হয় মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই মাছ শিকারও যেন বাঙালি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্রামাঞ্চলে মৌসুমি জলাশয় বা বিলে নানা সরঞ্জাম দিয়ে মাছধরা একটি সুপরিচিত দৃশ্য। বাংলাদেশে মাছধরার চিরায়ত দৃশ্যগুলো মধ্যে অন্যতম দারকি।
মন্তব্য করুন