কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ০৪:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবি ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চান ছাত্রদল নেতারা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘না’

ঢাবি ত্যাম্পাসে ঢাবি ছাত্রদলের সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। ছবি : সংগৃহীত
ঢাবি ত্যাম্পাসে ঢাবি ছাত্রদলের সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন। এর দায় প্রশাসনকে দিয়ে ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগের দাবি করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

বুধবার (১৪ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ পদত্যাগ দাবি করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে এ দাবির সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সাম্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রশাসন নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, আমরা ভেবেছিলাম নতুন বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। কিন্তু ফজলুল হক হলে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাসে হামলা করা হয়েছে। চারুকলায় মোড়াল পুড়িয়ে ফেলা হলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যদি কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না দেখি, ভিসি ও প্রক্টরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করব। দ্রুত পদক্ষেপ না নিয়ে ভিসি ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ ঘটনা প্রমাণিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আর নিরাপদ নয়। এর আগেও মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তা দেখেছি।

তিনি দাবি করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ। প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পদত্যাগ দাবি করছি। এক‌ই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে উপাচার্যও দায় এড়াতে পারেন না। তাই তারও পদত্যাগ দাবি করছি। গতকাল উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। তাই আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও এর দায় দিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার‌ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করা উচিত। অনতিবিলম্বে সাম্যের হত্যার বিচার দাবি করছি। প্রতিটি হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গ্ৰেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেও আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে। তাদের দ্রুত গ্ৰেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকায় শিক্ষার্থী সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত ভিসি ও প্রক্টরের কাছ থেকে কোনো ধরনের স্পষ্ট বিবৃতি আমরা পাইনি।

তিনি বলেন, এই প্রশাসন দায়িত্ব ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচার করা। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান আমরা দেখতে পাইনি। আমাদের মনে হয় তাদের দ্বারা কখনো সাম্য হত্যা বিচার করা সম্ভব না।

হুঁশিয়ারি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, আগামীতে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ একজন ছাত্রদল নেতা যদি হামলার শিকার হয়, তাহলে আমরা সেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররের পদত্যাগ দাবি করব।

এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতে, ক্যাম্পাসের বাইরের এলাকায় হত্যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়ী করা অযৌক্তিক।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাম্যের হত্যাকাণ্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটে, যা গণপূর্ত বিভাগের অধীনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যানের গেট বন্ধ করার চেষ্টা করলেও বাম ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী এবং উদ্যানের মাদক কারবারিরা সেই গেট খুলে দেয়।

ঢাবি শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, লাশের রাজনীতি করে ভিসি স্যারকে সরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি দল। যারা প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেনি, তারাই এখন ভিসি স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি কি খুনি? নাকি তাকে খুনি বানিয়ে রাজনীতির ফায়দা লুটতে চায় কেউ? একজন ভিসি হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব সাহসী ও বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিয়েছেন, তার কোনো তুলনা নেই।

ঢাবি বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী বলেন, সাম্য ভাইয়ের হত্যাকাণ্ড সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘটেছে, এটা দেখার দায়িত্ব ভিসি বা প্রক্টরের নয়। এর দায়ভার তাদের ওপর বর্তায় না। দীর্ঘদিন ধরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট বন্ধ করার চেষ্টা করা হলেও নানা মহলের বাধায় তারা পারেননি। এমনকি ক্যাম্পাসকে বহিরাগতদের জন্য নিষিদ্ধ করলেও পরে বিভিন্ন চাপের মুখে তা খুলে দিতে হয়। আমরা চাই ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হোক, নিরাপত্তা বাড়াতে সিসিটিভি এবং আলোর সংখ্যা বাড়ানো হোক।

উল্লেখ্য, ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাম্য এবং তিনি স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ না পড়াতে হাইকোর্টে রিট

বাংলাদেশি শ্রমিকের মরদেহের সঙ্গে সৌদি মালিকের নিষ্ঠুর আচরণ

আমরা চাইলে নতুন বিশ্ব গড়তে পারি : প্রধান উপদেষ্টা

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান আহমাদুল্লাহর

বিয়ের ৫ মাসে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

সাম্য হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন

গরম পানি নিক্ষেপে জবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন নিয়ে আইএসপিআরের বিবৃতি

কোটাবিহীন প্রাথমিকে বড় নিয়োগের প্রস্তুতি  

নিখোঁজের একদিন পর দাদি-নাতনির মরদেহ উদ্ধার

১০

পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মাঝে নতুন বিরোধে জড়াল ভারত

১১

সমাবেশ সফলে ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা

১২

নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব পালনের সঠিক প্রস্তুতি নিতে হবে : মঈন খান

১৩

কালবেলা এসি মেলা শুরু বৃহস্পতিবার

১৪

আশুলিয়ায় চার মাসে ৪২২ মিসকেস নিষ্পত্তি

১৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ 

১৬

টিউলিপকে ফেরাতে যে সিদ্ধান্ত নিল দুদক

১৭

ঢাবি ছাত্রদল নেতা হত্যায় গ্রেপ্তারকৃতদের নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

১৮

বিশ্লেষণ / ট্রাম্প কি ভারতের হাত ছেড়ে দিলেন?

১৯

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভ

২০
X