পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের দুই ছাত্র মারাধরের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। তারা দুজনই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
নবীনবরণের অনুষ্ঠান কেমন হবে এ নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে দুজনের কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে মারামারি হয় বলে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
মারধরের ঘটনায় দুজনই আহত হলে সহপাঠীরা তাদের পাবনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রোববার (২৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। মারধরের ঘটনায় জড়িত দুই শিক্ষার্থীর নাম রুমেল ও রনি। তারা পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা জানান, আগামী সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবে। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ কীভাবে দেওয়া হবে তা নিয়ে শনিবার পাবনা শহরের ডিগ্রি বটতলা এলাকার একটি মেসে আলোচনায় বসেন শিক্ষার্থীরা।
ওই সভায় রুমেল ও রনির মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রনি ক্ষিপ্ত হয়ে রুমেলকে বঁটি দিয়ে কোপ দিতে আসেন।
রোববার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সিনিয়রদের জানালে তারা মীমাংসা করতে বসেন। কিন্তু মীমাংসার রায় রুমেলের পছন্দ হয়নি বলে তিনি সবাইকে জানান।
রুমেলের দাবি, রাত ৯টার দিকে তাকে এডওয়ার্ড কলেজের কাছ থেকে তার বিভাগের কয়েকজন বড় ভাই হলে তুলে নিয়ে যান। পরে হলের একটি কক্ষে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের কৃষ্ণ, ইমরান, রায়হানসহ ১০-১২ জন সিনিয়র ও সহপাঠী তাকে লাঠি, স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করেন। পরে তাকে রাত ১১টার দিকে বড় ভাইয়েরা এডওয়ার্ড কলেজের পাশে তার মেসে দিয়ে যান। এরপর তার মেসের বন্ধুরা তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রনির দাবি, রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রুমেল, ইইসিই বিভাগের এক শিক্ষার্থী রাসেল এবং এক বহিরাগতসহ রথঘর এলাকায় রুমেল তাকে মারধর করেন। এ সময় তার কান দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। মারধর শেষে ওই তিনজন চলে যাওয়ার পর রুমেল সিনিয়রদের বিষয়টি জানান। পরে সিনিয়ররা বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য রুমেলকে হলে নিয়ে যান।
এদিকে রুমেলকে হলে কোনো মারধর করা হয়নি বলে দাবি করেছেন রুমেলের সিনিয়ররা। ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুপুরে আমরা ওদের বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য একবার বসেছি। কিন্তু রুমেল মীমাংসা মেনে নেননি। সন্ধ্যার পরে রনি আমাদের তাকে মারধরের বিষয়টি জানালে আমরা বিষয়টি নিয়ে পুনরায় মীমাংসা করার জন্য রুমেলকে হলে নিয়ে আসি। হলে রুমেলকে কোনো মারধর করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পুনরায় ঝামেলা না করার জন্য আমরা বলেছি। হল থেকে রুমেল সুস্থ অবস্থায় বের হয়েছে, তার মধ্যে কোনো অসুস্থতার ভাব দেখিনি। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার দিকে শুনতে পেলাম রুমেলকে নাকি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’
রাত সাড়ে ১১টায় রুমেলকে তার দুই বন্ধু হাসপাতালে ভর্তি করানো পর সাড়ে ১২টার দিকে রনিকে তার সিনিয়ররা হাসপাতালে এনে ভর্তি করান।
দুই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পর তাদের দেখতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামাল হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক ড. নাজমুল হোসেন এবং সহকারী প্রক্টর ড. মাসুদ রানা। দুই শিক্ষার্থীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এ ধরনের ঘটনা কারও কাছ থেকেই প্রত্যাশা করি না। নিজেদের মধ্যে মারামারি মোটেও কারও জন্য ভালো নয়। দুজন শিক্ষার্থী সুস্থ হলে আমরা ওদের নিয়ে বসব। ঘটনা যতটুকু ঘটেছে এর বাইরেও কোনো ঘটনা আছে কি না সেটা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব। তারপর বিষয়টির সমাধান করব।’
মন্তব্য করুন