দীর্ঘ ৫ মাসের অচলাবস্থা কাটিয়ে মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) থেকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শুরু হচ্ছে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে চলমান আন্দোলন তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার নিয়োগ পাওয়ার পরদিনই খুলনায় এসে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। শনিবার তিনি বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রোববার সকালে লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপকদের সঙ্গে এবং দুপুরে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন উপাচার্য।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন নতুন উপাচার্য। দীর্ঘদিন পর ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত পাঁচ মাসে কুয়েট দেশের অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় লেখাপড়ায় অনেক পিছিয়ে পড়েছে। ১৯তম ব্যাচের শিক্ষাজীবন মার্চে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদেরও ক্লাস শুরু হয়নি। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
কুয়েট শিক্ষার্থী স্বর্ণ রাজ বলেন, দীর্ঘ পাঁচ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমরা পুরো একটি সেমিস্টার পিছিয়ে পড়েছি। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছি। এতদিন অনিশ্চয়তায় কাটাতে গিয়ে মানসিকভাবেও আমরা চরমভাবে ভেঙে পড়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির আরেক শিক্ষার্থী আরশাদ হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পাঁচ মাস বন্ধ থাকায় শুধু অ্যাকাডেমিক ক্ষতিই নয়, মানসিক চাপেও পড়তে হয়েছে আমাদের। ল্যাবের কাজ, প্রজেক্ট আর রিসার্চ সবই থমকে ছিল।
তিনি আরও বলেন, সেশনজট বাড়ার পাশাপাশি ক্যারিয়ারের পরিকল্পনাও এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে এখন ক্লাস চালু হচ্ছে শুনে কিছুটা স্বস্তি লাগছে। অনেকদিন পর আবার ক্যাম্পাসে ফিরতে পারব এ আনন্দটা ভাষায় বোঝানো যাবে না।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন কালবেলাকে বলেন, উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিলে শিক্ষকরা যোগ দেবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফেরাতে যেসব জিনিস দরকার, সেগুলোও স্যার এগিয়ে নেবেন সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী বলেন, শিক্ষক ও ছাত্ররা একমত হয়েছে। ক্লাস ও তদন্ত কার্যক্রম একসঙ্গে চলবে। এজন্য মঙ্গলবার থেকে ক্লাস শুরুর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ৪ মে থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয়। সেই থেকে শিক্ষকেরা আর ক্লাসে ফেরেননি। আর শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে অধ্যাপক হজরত আলী পদত্যাগ করেন।
পরে ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। পরে গত বৃহস্পতিবার বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।
মন্তব্য করুন