পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (৫ নভেম্বর) এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ এবং তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে কিছু শিক্ষার্থীকে চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এমন কোনো চিত্র দেখা যায়নি।
মেলার অংশগ্রণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সাম হল অডিটোরিয়ামে সেমিনার এবং নিচ তলায় চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের জন্য মেলার আয়োজন করা হয়। যেখানে ১২টি কোম্পানিকে স্টল বসাতে দেখা যায়। তবে সকাল থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত স্টলে কোম্পানিগুলোর কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। এমনকি গুগল সার্চ করে কিছু কোম্পানির নাম এবং ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান, এ মেলায় নানা অনিয়ম ও অসংঙ্গতি হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলা চলার কথা থাকলেও দুপুর ৩টার দিকেই স্টলগুলো তুলে নেওয়া হয়। সিভি সংগ্রহও বন্ধ করে দেওয় হয়েছে। ফলে চাকরির খোঁজে সিভি জমা দিতে এসে আমাদের চরম হতাশ হতে হয়েছে। বলা যায় সেখান থেকে শূন্য হাতে ফিরেছি আমরা।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, স্টলগুলোতে কোম্পানিগুলোর কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও প্রত্যেকটি স্টলে সিভি দেওয়ার জন্য একটি বক্স ছিল।
তখন আয়োজকরা জানান, কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি না আসলেও তারা সিভিগুলো সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পৌঁছে দিবে। পরবর্তীতে দুপুর ৩টার দিকে বক্সগুলোতে কিছু শিক্ষার্থী জীবন বৃত্তান্ত জমা দিতে দেখা যায়। পরে সবগুলো বক্সগুলো এক্সাম হলের নিচে জড়ো করে রাখা হয়।
তবে সেগুলোতে কোনো কোম্পানির নাম লেখা ছিল না। বেনামি বক্স থেকে জীবন বৃত্তান্তগুলো কীভাবে বাছাই কবা হবে এবং কোম্পানিগুলোর কাছে তা কীভাবে পৌঁছে দিবে এই বিষয়টি জানতে চাইলে আয়োজকদের কেউ এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, ‘সিভি দেওয়ার কথা কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে কিন্তু তারাই তো আসেনি। প্রতিনিধি ছাড়া সিভি নেওয়াটা লোক দেখানো। অনুষ্ঠান শেষ হলে সিভিগুলো ফেলা দেওয়া হবে, কোম্পানির কাছে পৌঁছানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মচারী বলেন, ‘এ চিত্র শুধু এই ক্যাম্পাসের না, প্রায় সবগুলো জায়গাতেই এমন। কোম্পানিগুলোর নামে স্টল দেওয়া থাকে কিন্তু তারা আসেন না। সরকারি একটা প্রকল্প চলছে, আয়োজকদের আয়োজন করা দরকার তারা এটা করছে। শিক্ষার্থীদের বলা হয় সিভি দিয়ে যেতে। কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে বলা হয় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
চাকুরির খোঁজতে আসা সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এ মেলা নিয়ে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু স্টগুলোতে এসে আমি হতাশ হয়েছি। স্টলগুলো ফাঁক, কার কাছে যাব, কার কাছে সিভি দিব কিছুই খুঁজে পাইনি। এভাবে লোক দেখানো একটা প্রোগ্রামের কোনো প্রয়োজন ছিল না।’
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘দুপুরে সেমিনার শেষ করে সিভি দেওয়ার জন্য স্টলে আসি। কিন্তু স্টলগুলো দেখলাম ফাঁকা। কাজ করতে থাকা কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন মেলা শেষ। সিভি জমা দিয়ে চলে যান। কিন্তু আমি কার কাছে সিভি জমা দেব এমন কাউকে পাইনি। পরে সিভি দেওয়ার বক্স দেখে সেখানে সিভি রেখে চলে আসি ‘
মেলা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করেছেন আইসিটি সেল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিটি সেলার পরিচালক ড. আবদুর রহিম বলেন, আমরা প্রোগ্রাম আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করেছি মাত্র। এর মূল দায়িত্ব ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের লোকজনেরা। সব কিছু দেখভাল ওনারাই করেছেন। তাই প্রোগ্রামে কোন অনিয়ম হলে এটার দায়ভার সম্পূর্ণ তাদের।
খোঁজ নিয় জানা যায়, বিভিন্ন জেলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলা’ কর্মসংস্থান মেলার আয়োজক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ হলেও এটি দেখভাল করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এ মেলাগুলো বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে দিয়ে করিয়ে থাকেন। পাবিপ্রবিতে মেলার দায়িত্বে ছিলেন ‘গ্রিন ইভেন্ট’ নামের একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। এ কোম্পানি রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মেলার আয়োজনের দায়িত্বে ছিল।
মেলার অনিয়মের বিষয়ে গ্রিন ইভেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান মুনাফ অর্নবের কাছে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে স্টল দেওয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা আসতে পারেননি। এটার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সিভি সংগ্রহ করেছি। এগুলো আমরা কোম্পানিগুলোর কাছে পৌঁছে দেব।’
বিষয়টি নিয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সচিব রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থান মেলাগুলোতে এ রকম ঘটনা যে ঘটে সেটা আমাদের জানা ছিল না। এখন যেহেতু আমরা জেনেছি আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’
মন্তব্য করুন