উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দর্শন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দিবসটি উপলক্ষে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন দর্শন বিভাগসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা জানান, জাতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী আলাদা করে পালন করা উচিত ছিল। এতে বোঝা যায় প্রশাসন দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সরওয়ার জাহান বলেন, ‘হাসান আজিজুল হক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব। তিনি একজন জাতীয় ব্যাক্তিত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল উনার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা। কিন্তু তারা যে কেন কিছুই করলো না, এ বিষয় আমার বোধগম্য নয়!’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নিলুফার আহমেদে বলেন, ‘আমাদের বিভাগের উদ্যোগেই হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সামনের বছর থেকে আমাদের বিভাগকে সহযোগিতা করবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি। আজ তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এতে বোঝা যায় প্রশাসন দেশ বরেণ্য ব্যক্তিদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করছে না। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তীতে এসব বিষয়ে সচেতন থাকবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় গুণী ব্যক্তিদের মৃত্যবার্ষিকীসহ অন্যান্য আয়োজন নিজ নিজ বিভাগের উদ্যোগে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। হাসান আজিজুল হকের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। আমরা প্রশাসন থেকে দর্শন বিভাগকে সহযোগিতা করেছি।’
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি অনেক গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার রচিত জনপ্রিয় গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘আমরা অপেক্ষা করছি’ ইত্যাদি। আগুনপাখি ও শামুক যথাক্রমে তার রচিত প্রথম ও শেষ উপন্যাস।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। গত বছর তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করে।
মন্তব্য করুন