চোখ বুজে চিন্তা করুন তো, আপনি একটা রাস্তা ধরে হাঁটছেন। যেখানে পথের দুইপাশে নানা রং-য়ের ফুল ফুটে আছে। ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি। পুরো আঙিনা জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। নাম না জানা অনেক পাখিও উড়াউড়ি করছে গাছের ডালে। হেঁটে হেঁটে যত দূর পথ যাচ্ছেন ফুলের ছড়াছড়ি। ভেবে বলুন, তবুও কি মন বিষণ্ন হয়ে থাকবে? এই বর্ণিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করবে?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ক্যাম্পাসটি ঠিক এমনই। সবুজ প্রকৃতি আর লাল রঙের ইটপাথরে ঘেরা এই বিদ্যাপিঠের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ এবং শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের ফুল। নজরকাড়া ফুলের মন মাতানো সৌরভ ও স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। লাল, নীল, হলুদ রঙের কসমস ফুলের সৌন্দর্য্যে যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে জাবি ক্যাম্পাস।
এমন আবহেই প্রতিদিন সকালে মিষ্টি রোদে ঝলমলে হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে যার মতো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছেন। শহীদ মিনার যেতেই চোখে পড়লো ফুলের বাগান। বাহারি রঙের ফুল আর ফুল। ফুলঘেরা মাঠের মাঝখানে শিক্ষার্থীরা কথা বলছে। কোনো কোনো শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে ফুলের ছবিও তুলতে দেখা গেল। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে-কোনো ফুলের বাগানে এসে পড়লাম বুঝি! ঢাকা জেলার শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমন পুষ্পশোভিত নান্দনিক ক্যাম্পাস আর চোখে পড়ে না।
এর মধ্যে শীতকালে বাহারি রং-রূপের কসমস ফুলটির বিস্তার নজর কাড়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, অনুষদ, অফিসের প্রাঙ্গণে দেখতে পাওয়া যায় এই ফুল গাছ । ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় এমনকি অনেকের বাগানেও মাথা তুলতে দেখা যায় লিকলিকে সবুজ এই গাছ। নানা রঙের ফুল ফোটে এতে। হলুদ, কমলা, চকোলেট, হালকা-গাঢ় গোলাপি এবং সাদা রঙের কসমস দেখতে খুবই ভালো লাগে।
এ ফুল ছাড়াও সারা বছরই নানা প্রজাতির ফুলে সুশোভিত থাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বসন্ত এলে সেই সৌন্দর্য পায় নতুন মাত্রা। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অফিস ও রাস্তার পাশে প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বিচিত্র ধরনের ফুলের বাগান। বাদ যায়নি প্রশাসনিক ভবন, অনুষদ, আবাসিক হল, লাইব্রেরিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চত্ত্বর। যেখানে শোভা পাচ্ছে নানা প্রজাতির ফুল। এদের মধ্যে গাঁদা, গোলাপ, কৃষ্ণচূড়া, মুসুন্দা, সোনালু, শিমুল, কসমস, রঙ্গন, জবা, ঝাউ, বাগান বিলাস অন্যতম ।
ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছি, প্রজাপতি। মনে হয়, বসন্ত যেন তার পুরো রং-রূপ নিয়ে নেমে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। প্রতিদিন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসের এই সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কেউ-বা সবুজ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থাকা ফুলের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
বসন্তের আগমনে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি তার জীর্ণতা মুছতে শুরু করেছে। শীতের পাতাঝরা বৃক্ষগুলো এত দিন যেন বিগত যৌবনা বৃদ্ধার মতো দাঁড়িয়ে ছিল রিক্ত বেশে। বসন্ত এসে তাকে দান করেছে যৌবনের উন্মাদনা।
মৃতপ্রায় নগ্ন ডালগুলোতে আসতে শুরু করেছে নতুন পাতার আশীর্বাদ। ঋতুর পালাবদলে এবারও বৈচিত্র্যময় ফুলে সেজেছে পুরো ক্যাম্পাস। বসন্তের আগমনে সজীবতা ফিরে পেয়েছে এই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকেই বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা পুরো ক্যাম্পাস। ফুলের বাহারি সৌরভ প্রকৃতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে ।
এ ব্যাপারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, ফুলের সৌরভ এক দিকে যেমন মানুষকে বিমোহিত করে, তেমনি এর সৌন্দর্য প্রাকৃতিক পরিবেশকেও করে তোলে আকর্ষণীয়। ফুলের বাগান ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার পরিবেশকেও করেছে সৌন্দর্যমণ্ডিত ।
লেখক: ইমন ইসলাম, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য করুন