ইডেন কলেজ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এক বছর, কী ভাবছেন ইডেন শিক্ষার্থীরা

ইডেন মহিলা কলেজ। পুরোনো ছবি
ইডেন মহিলা কলেজ। পুরোনো ছবি

ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে কলেজকে রাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হয়। বন্ধ হয় সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। যার ফলে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা ও সংঘাতের পরিবেশে অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতি মুক্ত ঘোষণার এক বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

গত এক বছরে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক স্লোগান, মিছিল ও পোস্টারের পরিবর্তে দেখা গেছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও শিক্ষামূলক সেমিনার। অনেক শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে শিক্ষার পরিবেশ। কিন্তু অন্যরা মনে করছেন ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গণতান্ত্রিক চর্চা ও নেতৃত্বের সুযোগ কমে গেছে।

২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার বলেন, অনেক সময় ক্যাম্পাসে অনেক কিছু প্রয়োজন হয় সেগুলো উপস্থানের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যারা রাজনীতি করে তারাই সিদ্ধান্ত নেয়, এটা উচিত নয়।

এ বিষয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান পরিবেশ ভালো। প্রতিষ্ঠান এখন সুন্দর ও স্বাভাবিক আছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই ।

মার্কেটিং বিভাগে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র রাজনীতি আমার পছন্দ না, কিন্তু যদি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় ঠিক আছে। আওয়ামী লীগ আমলের মতো করলে আমরা আবার প্রতিবাদ করব।

এ বিষয়ে সাদিয়া আফরিন মৌ বলেন, আমরা যদি পূর্বের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি তুলনা করি তাহলে বর্তমান শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করে, মুক্ত পাখির মতো তারা ইডেন ক্যাম্পাসের প্রতিটা অঙ্গনে ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগে পারত না। তাদের মনে একটা আতঙ্ক কাজ করত। প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক নেত্রীদের সালাম দিয়ে চলাফেরা করার প্রবণতা ছিল, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক বেশি অস্বস্তিকর।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি করা সবার গণতান্ত্রিক অধিকার সেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনীতিটাকেও সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে আমি মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রকম রাজনৈতিক আধিপত্য বহাল না থাকাই শ্রেয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা নগর শাখার অর্থ সম্পাদক ও সমাজকর্ম বিভাগ বিভাগের সুমাইয়া শাইনা বলেন, গত ১৬ বছর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এককভাবে আধিপত্য কায়েম করেছে এবং অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়নি। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, সিট বাণিজ্য, গেস্টরুম, গণরুম কালচারের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাজনীতির চর্চা করেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে এক ধরনের আতঙ্ক ও ভীতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই ভীতিকে পুঁজি করে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে। কিন্তু আমরা জানি ছাত্র রাজনীতির মূল কাজ হলো ছাত্রদের অধিকারের কথা বলা, ছাত্র ও শিক্ষা রক্ষায় ভূমিকা পালন করা।

তিনি আরও বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি কলেজ প্রশাসন কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে একের পর এক শিক্ষার্থীর স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমাদের কলেজে এখনো পর্যন্ত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো আয়োজন আমরা দেখতে পাইনি, এদিকে ছাত্র সংগঠনগুলো থাকলে তারা মতামত প্রদান করতে পারত। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

ইডেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি বলেন, বিগত ১৭ বছর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে শুধু ইডেন ক্যাম্পাস নয় বাংলাদেশের কোনো ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ ছিল না। ছাত্রলীগ ছাড়া কোনো দল কথা বলতে পারত না। সে সময় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সিট বাণিজ্য, দখলদারিত্ব এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করাই ছিল তাদের মূল টার্গেট।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে একটি পক্ষ একক অধিপত্য কায়েম করতে চাচ্ছে আর এগুলোর মদদ দিচ্ছে আওয়ামী সমর্থিত শিক্ষকরা। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পদক্ষেপটি আমি সঠিক বলে মনে করি না। যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে ওঠে কিন্তু ক্যাম্পাসের মাধ্যমে।

ইডেন মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামছুন নাহার বলেন, আমি ২০২৩ সালে ইডেনে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করি অর্থনীতি বিভাগে। রাজনীতিতে খুব সক্রিয় শিক্ষার্থী আমার চোখে পড়েনি বা সক্রিয় থাকলেও তা প্রকাশিত ছিল না। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ বেশি থাকে প্রশাসনের সঙ্গে, যেহেতু আমি প্রশাসনে ছিলাম না কাজেই তাদের সম্বন্ধে বেশি কিছু জানে নেই। আন্দোলন চলাকালে তাদের কিছু কার্যক্রম দেখেছি এই পর্যন্তই।

তিনি আরও বলেন, এক বছর থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ না বলে বলা উচিত দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ। প্রতিটি শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে তাদের বাগস্বাধীনতা চর্চা করছে জাতীয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বিষয়ে তাদের মত প্রকাশ করছে। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব সচেতনতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা গঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছাত্র রাজনীতি হওয়া উচিত দলীয় রাজনীতির প্রভাব মুক্ত।

ইডেন মহিলা কলেজে গত এক বছরে রাজনৈতিক উত্তাপের জায়গা নিয়েছে সংস্কৃতি ও শিক্ষাচর্চার উষ্ণতা। কেউ মনে করছেন এটি শিক্ষার্থীদের মুক্ত শ্বাস নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, কেউ বলছেন নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক চর্চার পথ সংকুচিত হয়েছে। তবে একটা বিষয়ে সবাই একমত, শিক্ষাঙ্গনে জ্ঞানচর্চা, সৃজনশীলতা ও নিরাপত্তার অভয়ারণ্য, যেখানে রাজনীতি থাকলেও তা হবে সুষ্ঠু, গঠনমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ম্যানসিটি ছাড়ছেন আর্জেন্টিনার ‘নতুন মেসি’

‘৫১ লাখ টাকার স্টেডিয়াম ১৪ কোটিতে করার অনুমোদন’, কী ব্যাখ্যা দিলেন সচিব

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

১০

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

১১

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১২

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১৩

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১৪

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৫

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৬

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৭

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৮

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৯

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

২০
X