রাতে বিছানায় শুয়ে আছেন, অথচ ঘুম আসছে না। পায়ে বারবার অস্বস্তি লাগছে; কখনো জ্বালা, কখনো ব্যথা, কখনো আবার গা ছমছম করছে। মনে হচ্ছে নাড়াচাড়া না করলে আরাম নেই। ফলে অনিচ্ছায় ঘন ঘন পা নাড়তে থাকেন। অনেকে আবার ঘুমের মধ্যেও টের পান না, তবু তাদের পা নড়ে চলে। এমন হলে এটিকে হালকাভাবে নিলে চলবে না।
কারণ চিকিৎসকরা বলছেন, এটি হতে পারে ‘রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম’ বা আরএলএস নামের একটি স্নায়বিক রোগের লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত অনেকেই আসলে বুঝতেই পারেন না যে, তারা সমস্যায় ভুগছেন। অথচ বিষয়টি ধরা না পড়লে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএলএস-এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণত বসে বা শুয়ে থাকার সময় পায়ে টান ধরা, ঝিনঝিনি, জ্বালা বা অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। তাই বারবার পা নাড়াতে ইচ্ছে করে। সাময়িক স্বস্তি মিললেও ঘুম ভেঙে যায় কিংবা ঘুম আসতে দেরি হয়।
কেন হয় এই সমস্যা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের মূল দুটি কারণ। প্রথমত বংশগত প্রভাব, দ্বিতীয়ত শরীরের আয়রনের ঘাটতি।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
অন্তঃসত্ত্বা, মাসিক হয় এমন নারী, অ্যানিমিয়া রোগী, ডায়ালাইসিসে থাকা রোগী ও নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এ ছাড়া কিছু ওষুধ—বিশেষ করে সেরোটোনিন রিইনটেক ইনহিবিটার জাতীয় ওষুধ গ্রহণকারীরাও ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি এ সমস্যা দেখা যায়।
করণীয় কী?
চিকিৎসকরা বলছেন, জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব—
১. অ্যালকোহল ও চিনি খাওয়া কমানো
২. নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস তৈরি করা
৩. হালকা শরীরচর্চা করা
৪. আয়রনের ঘাটতি থাকলে সাপ্লিমেন্ট বা ইনফিউশন নেওয়া
৫. পায়ে ম্যাসাজ, গরম বা ঠান্ডা পানির সেঁক দেওয়া
৬. হাঁটাহাঁটি বা মনোযোগ ধরে রাখার মতো কাজ করা
তবে দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তি চলতে থাকলে অবশ্যই স্নায়ুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। প্রয়োজনে গ্যাবাপেন্টিন বা প্রিগ্যাবালিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি রক্তে ফেরিটিন লেভেলও পরীক্ষা করতে হতে পারে।
উপেক্ষা নয়, সচেতনতা জরুরি
চিকিৎসকরা বলছেন, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম একেবারেই নিরাময়যোগ্য। তবে উপসর্গকে গুরুত্ব না দিলে এর প্রভাব সারাদিনের কাজে পড়ে। সব সময় ক্লান্তি, বিরক্তি বা মেজাজ খারাপ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ায়। তাই রাতের বেলায় অকারণে পা নাড়াকে অবহেলা না করে সময়মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
মন্তব্য করুন