চিকিৎসক ও নার্স ভালোভাবে কাজ করলে কেউ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালী নার্স টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রকল্পটি কানাডিয়ান সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সব হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় এখন নার্স ও চিকিৎসকদের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা দরকার। আমরা চাই আপনারা নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। সেবার পরিধি বাড়ান। আপনারা ভালো সেবা দেন। যারা রোগী আসে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করেন। মা ও বোনের মতো মমতা দিয়ে সেবা দিতে হবে। ভালো আচরণে রোগী অর্ধেক ভালো হয়ে যায়। আমি আশা করবো আপনারা ডাক্তার, নার্স, টেকনোলজিস্ট মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীকে সেবা দিবেন।
তিনি বলেন, কার্ডিয়াক, আইসিইউ, অনকোলজিতে স্পেশালাইজড নার্স দরকার। মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। সেটা আপনারা পারবেন। আমার বিশ্বাস বিদেশে কেউ চিকিৎসা নিতে যাবে না আপনারা কাজ করলে। অসুস্থ মানুষের সবচেয়ে বেশি সংস্পর্শে থেকে সেবা করে সুস্থ করে তোলে নার্স। রোগী নার্সের তত্ত্বাবধায়নে থাকে। রোগীও তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কোভিডকালে রোগীর স্বজনরা পালিয়ে গেলেও চিকিৎসক নার্স জীবন বাজি রেখে রোগীর সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। যার ফলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ ও ভ্যাকসিনেশনে বাংলাদেশ এশিয়ায় প্রথম ও বিশ্বের তালিকায় পঞ্চম হয়েছে। এই অর্জনে চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের নার্সদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব আন্তরিক। বঙ্গবন্ধু নার্সদের সম্মান দিয়ে গেছেন। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সম্মানকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের বেতনভাতা বাড়িয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৪৫ বছরে দেশে মাত্র ১৮ হাজার নার্স নিয়োগ হয়েছে। আর বর্তমান সরকারের গত পাঁচ বছরে ২৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন দেশে ৪২ হাজারে নার্সের সংখ্যা উন্নীত করেছি। দেশের সরকারি-বেসরকারি নার্সিং কলেজ ইনস্টিটিউটে প্রায় ৩৪ হাজার সিট রয়েছে। প্রতিবছর যদি এসব শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে তৈরি করা যায় তাহলে প্রতিবছর সেখান থেকে ৩০ হাজারেরও বেশি নার্স কাজে যোগ দিতে পারবে। নার্সের উচ্চশিক্ষার জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েট, এমডি, পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতের চিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, দেশে হেলথ সেক্টরে অনেক অর্জন রয়েছে। কমিউনিটি ক্রিনিকের কল্যাণে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। ইপিআইয়ের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা দেশে স্বাস্থ্যসেবায় শয্যা, প্রতিষ্ঠান ও যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ হয়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান বলেন, নার্সিং পেশার যোগ্যতা বাড়লে চিকিৎসাসেবার মান বাড়বে। আর চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার মান বাড়বে। নার্সিং শিক্ষার মান আন্তর্জাতিকমানে উত্তীর্ণের জন্য ভারতের কেরালা, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে আন্তর্জাতিকমানের কারিকুলাম প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নিলুফার নাজনীন ও কানাডিয়ান হাই কমিশনের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স দেব্রা বয়েস প্রমুখ।
মন্তব্য করুন