সম্পর্ক মানেই সবসময় ভালো থাকা নয়। ঝগড়া, মতবিরোধ, মান-অভিমান—এসব তো থাকবেই। কিন্তু অনেক সময় ঝগড়ার পর সঙ্গী যদি হঠাৎ করে একদম চুপচাপ হয়ে যান, আপনাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন, আর কোনো কথাই না বলেন—তাহলে সেটা নিছক অভিমান নয়, হতে পারে ‘সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট’। মানে, ইচ্ছাকৃতভাবে কথা না বলে আপনাকে মানসিকভাবে আঘাত করা।
মনোবিজ্ঞানী ড. আমেলিয়া কেলি এই আচরণকে বলেন এক ধরনের মানসিক নির্যাতন। কারণ, এই নীরবতা ব্যবহার করে একজন মানুষ অন্যজনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।
চুপ করে থাকা সবসময় ক্ষতিকর নয়, কিন্তু... ড. কেলি বলছেন, কেউ কেউ নিজেকে শান্ত রাখার জন্য কিছু সময়ের জন্য চুপ থাকেন—সেটা একেবারে স্বাভাবিক। কিন্তু ইচ্ছা করে সঙ্গীর অনুভূতিকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বা ভুল স্বীকার না করা পর্যন্ত মুখ না খোলাটা একদমই ঠিক নয়।
এই নীরবতা সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ায়, সঙ্গীর মধ্যে অনিরাপত্তা, দুঃখ, হতাশা তৈরি করে এবং আস্তে আস্তে সম্পর্ক ভেঙে ফেলার পথে নিয়ে যায়।
- মুখে কথা বন্ধ, তবে প্রয়োজনে শুধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলছেন
- মেসেজে জবাব দিচ্ছেন না বা অনেক দেরিতে দিচ্ছেন
- সঙ্গীকে ঘরের মধ্যে থেকেও ‘অদৃশ্য’ বানিয়ে রাখা
এগুলো ছোট মনে হলেও মানসিকভাবে অনেক বেশি ক্ষত করে।
ড. কেলি কিছু সহজ কৌশল দিয়েছেন, যেগুলো মানলে আপনি এই পরিস্থিতি সামলাতে পারবেন—নিজের সম্মানও বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।
আপনিও পুরোপুরি চুপ থাকবেন না : সম্পর্কে দুজন যদি একসঙ্গে চুপ থাকেন, তাহলে সমস্যার কোনো সমাধানই হবে না। আপনার অনুভূতি বা প্রয়োজন স্পষ্ট করে বলুন—যেন সঙ্গী বোঝে আপনি অভিমান করছেন না, বরং সমস্যা বুঝে নিতে চাইছেন।
বুঝতে চেষ্টা করুন, কিন্তু প্রশ্রয় দেবেন না : সঙ্গী কেন এমন আচরণ করছেন সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কিন্তু তার খারাপ ব্যবহারে নিজেকে দোষী ভাববেন না। খারাপ আচরণকে কখনোই ‘ভালোবাসা’ বা ‘অভিমান’ বলে মেনে নেবেন না।
আপনার কষ্টের কথাগুলো স্পষ্টভাবে জানান : অনেক সময় সঙ্গী বুঝতেই পারেন না যে তাদের নীরবতা আপনাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে। তাই খোলাখুলি বলুন, এই আচরণে আপনি কেমন অনুভব করছেন এবং এর প্রভাব কী হতে পারে।
আলোচনার পথ খুলে দিন : নীরবতা ভাঙার একমাত্র উপায়—খোলা আলোচনা। বলুন, এমন পরিস্থিতি এলে পরবর্তীতে কীভাবে দুজন মিলে সামলাবেন। একে অন্যকে বোঝার জন্য সময় দিন, কথা বলুন।
যদি কোনো কিছুতেই কাজ না হয় তবে কী করা উচিত? সব চেষ্টা করেও যদি সঙ্গী একইভাবে নীরবতা দিয়ে আপনাকে কষ্ট দিতে থাকেন, তাহলে ভেবে দেখতে হবে—এই সম্পর্ক আপনার জন্য আদৌ ভালো কি না। একটা সম্পর্কে থাকলেই সেটা টিকিয়ে রাখতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। সম্পর্কের চেয়ে আপনার মানসিক শান্তি অনেক বেশি জরুরি।
সম্পর্কে মতবিরোধ হতেই পারে। কিন্তু সেগুলো কথা বলে, বোঝাপড়ার মাধ্যমে ঠিক করা যায়। চুপ থেকে, উপেক্ষা করে কাউকে শাস্তি দেওয়া ভালোবাসার পরিচয় নয়—বরং সেটা সম্পর্ককে ধ্বংস করার শুরু।
সূত্র : ভোগ ম্যাগাজিন
মন্তব্য করুন