

দৈনন্দিন জীবনে ধুলো, দূষণ, ঘাম আর চুলের যত্নে ব্যবহৃত বিভিন্ন পণ্যের অবশিষ্টাংশ—সবকিছুই দিনের শেষে এসে জমে মুখে। যদি সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার না করা হয়, এই ময়লা-তৈলাক্ত পদার্থ ত্বকে জমে লালচে ভাব, ব্রণ, জ্বালা-পোড়া এমনকি অকাল বার্ধক্যের কারণ হতে পারে।
অনেকে মুখ ধোয়ার জন্য বার সাবান ব্যবহার করেন, আবার অনেকে এটিকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলেন। তাহলে আসলে কোনটা ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সব সাবান মুখে ব্যবহারযোগ্য নয়। বরং বেশিভাগ বার সাবান মুখের ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ করে দিতে পারে।
বার সাবান দিয়ে মুখ ধোয়ার কোনো উপকারিতা আছে কি?
কিছু বিশেষ ধরনের বার সাবান তুলনামূলকভাবে মৃদু হতে পারে এবং সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার উপযোগীও হতে পারে। তবে যেকোনো বার সাবান মুখে ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে, এটি যেন ফেসিয়াল ব্যবহারের জন্যই তৈরি করা হয়।
বর্তমানে অনেক প্রসাধনী ব্র্যান্ড আলাদা করে ফেসিয়াল বার সাবান বাজারে এনেছে। এসব সাবান বাছাইয়ের সময় বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এমন পণ্য বেছে নিতে, যা সুগন্ধিহীন, অ্যালার্জি প্রতিরোধী ও পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজিং উপাদানসমৃদ্ধ। যেমন সিরামাইডস, গ্লিসারিন, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও নিয়াসিনামাইড। এ ক্ষেত্রে ডাই বা রঙ, প্যারাবেন, সুগন্ধি বা ফ্র্যাগরেন্স, ল্যানোলিন ও ফরমালডিহাইডজাতীয় সাবান এড়িয়ে চলা উচিত।
মুখে বার সাবান ব্যবহারে ক্ষতির দিকগুলো
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ বার সাবান মুখে ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ-
১.বেশিভাগ বার সাবানে রঙ ও সুগন্ধি থাকে, যা সংবেদনশীল মুখের ত্বকে জ্বালাভাব বা লালচেভাব তৈরি করতে পারে।
২. সরাসরি সাবান ঘষা ত্বকে ক্ষতিকর ঘর্ষণ তৈরি করে।
৩.অনেক সাবানেই পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার থাকে না, ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়।
৪.সাবানের আকৃতি ও আকারের কারণে মুখের সব জায়গা সমানভাবে পরিষ্কার হয় না।
এছাড়া বেশিরভাগ সাবানের pH মান অনেক বেশি, যা শরীরের জন্য ভালো হলেও মুখের কোমল ত্বকের জন্য অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত হয়ে পড়ে।
বিকল্প হিসেবে কী ব্যবহার করবেন?
বার সাবানের বদলে মুখের জন্য তৈরি বিশেষ ক্লিনজার ব্যবহার করাই উত্তম। বাজারে নানা ধরনের ফেসিয়াল ক্লিনজার পাওয়া যায়, ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে তা বেছে নেওয়া যায়।
মুখ ধোয়ার সঠিক নিয়ম
প্রতিদিন সকালে, রাতে এবং ঘাম ঝরানোর পর ঠিকভাবে মুখ ধোয়া জরুরি। সঠিক পদ্ধতিতে ধোয়া হলে ত্বক থাকবে পরিষ্কার ও সতেজ।
মুখ ধোয়ার ধাপগুলো হলো— ১. কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ভিজিয়ে নিন।
২. হাত দিয়ে ক্লিনজার লাগিয়ে নিন।
৩. আঙুলের ডগায় হালকা বৃত্তাকারে ঘষে পরিষ্কার করুন।
৪. আবার কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৫. নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন।
৬. শেষে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
কখনোই মুখে জোরে ঘষবেন না, স্ক্রাব বা রুক্ষ কাপড় ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বকে জ্বালা-পোড়া বা ক্ষতি হতে পারে।
সারকথা
সাধারণ বার সাবান মুখের জন্য নয়। এতে থাকা ক্ষার ও রঙিন উপাদান মুখের কোমল ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ করে দেয়। মুখ পরিষ্কারের জন্য সবসময় এমন ক্লিনজার বেছে নিন, যা বিশেষভাবে ফেসিয়াল ব্যবহারের জন্য তৈরি এবং আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযোগী। সঠিক ক্লিনজার ও নিয়মিত যত্নই দিতে পারে সুস্থ, মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক।
সূত্র : হেল্থ লাইন
মন্তব্য করুন