রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। একইসঙ্গে হত্যা ও সহিংসতায় জড়িতদের দ্রুততার সঙ্গে বিচারের আওতায় আনা; আন্দোলনে নিহতদের পরিবারগুলোকে সহায়তা করা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আহতদের সুচিকিৎসাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে এ নাগরিক সংগঠন।
শনিবার (২৪ আগস্ট) বেলা ১১টায় রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সুজন আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানান সুজন নেতারা।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা তা থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছিলাম।
বিগত নব্বইয়ের সময়ে তিনজোটের রূপরেখার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের আরেকটি সুযোগ তৈরি হলেও আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। তাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এখন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে তাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে একইসঙ্গে দুটো কাজ করতে হবে।
প্রথমত, বিগত সময়ে যারাই দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের বিচার করা।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে বহুমুখী সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। প্রশাসনের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা পালিয়ে গেছেন। এটা নজিরবিহীন।
এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক ঘরবাড়ি ধসে গেছে, ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিত্তবানদের উচিত হবে ঘরবাড়ি নির্মাণে সহায়তা ও চারা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা এবং প্রধান উপদেষ্টার তহবিলেও দান করা।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় সেনাবাহিনী জনগণের ওপর গুলি না চালিয়ে একটি অভূতপূর্ব কাজ করেছে। সেনারা এখন বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে সহায়তা করবে।
এছাড়াও বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানাদাশ গুপ্ত বলেন, একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়ে ছাত্র-জনতা যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে তার জন্য আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।
ছাত্র সমাজ নিয়ে তিনি আরও বলেন, ছাত্র সমাজের অভিলাষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নাগরিক সমাজকে সেই স্বপ্নের জাল বুনে নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়েই ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা ছাড়াও সুজনের উদ্যোগে একই দাবিতে সারা দেশের সব জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকার মানববন্ধনে সুজন নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।
সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, হেলফ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি খন্দকার শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
মন্তব্য করুন