জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন-২০২৫ উপলক্ষে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে সারা দেশে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, এসব কর্মসূচি সফলে এরই মধ্যে সারা দেশের সব জেলা-মহানগরী শাখাকে সার্কুলারের মাধ্যমে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন একপর্যায়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রচণ্ড গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ন্যক্কারজনক হামলা, গুলিতে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরতে শুরু করে। ১৬ জুলাই রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের ওপর পুলিশের গুলির দৃশ্য বিবেকবান মানুষকে প্রচণ্ডভাবে ব্যথিত করে। আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। সারা দেশে শহীদ ও আহতের সংখ্যাও দ্রুত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পতন ঘটে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের।
তিনি বলেন, লাখো ছাত্র-জনতার সঙ্গে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে খেলাফত মজলিস ও এর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী যুব মজলিস, শ্রমিক মজলিসও শুরু থেকেই এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আন্দোলনে প্রায় ২ হাজার আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শহীদ ও আহতদের তালিকায় রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, নারী, শিশু, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ। আমরা সব শহীদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, প্রকৃতপক্ষে ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ৩৬ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাই স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের পলায়নের মাধ্যমে সফলতায় পৌঁছে। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ফ্যাসিবাদবিরোধী এ অভ্যুত্থানের ঐক্যের চেতনাকে অটুট রাখতে এ আন্দোলন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কোরবানিকে স্মরণীয় রাখতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
খেলাফত মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে :
১। মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সব প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা।
২। শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আহতদের খোঁজখবর নেওয়া ও সম্ভাব্য সহযোগিতা করা।
৩। ফ্যাসিবাদী খুনিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কারপূর্বক দ্রুত জুলাই সনদ ঘোষণা ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সারা দেশে গণজমায়েত, আলোচনা সভা, গণসংযোগ, মতবিনিময় ও মিছিলের আয়োজন করা।
৪। শিশু-কিশোর-ছাত্র সমাবেশ করা। ২৪’র জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কুইজ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ, আন্দোলনের ভিডিও প্রদর্শণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৫। ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাৎ দিবসে দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান।
৬। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ব্লাড গ্রুপিং ও রক্তদান কর্মসূচি পালন করা।
৭। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন প্রকাশ ও দেয়াল লিখন করা।
৮। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দিবসে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গণ সমাবেশ/ আলোচনা সভা/ র্যালির আয়োজন করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হলো। এসব কর্মসূচি ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনাকে জাগ্রত রাখবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জুলাই মাসের মধ্যেই বড়জোড় ৫ আগস্টের মধ্যে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হবে। এর পরই জুলাই সনদ ঘোষিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আমরা চাই। তবে সেটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে এটি প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, প্রচার ও তথ্য সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল হাফিজ খসরু প্রমুখ।
মন্তব্য করুন