ভৈরব পৌরসভা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পাদুকা শিল্প খাতের সমৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক প্রচারণা বিষয়ক সেমিনার এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে।
মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদ মাঠে এ প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারের অংশ হিসেবে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে ভৈরব ও আশেপাশের ৮টি পৌরসভার (কিশোরগঞ্জ, বাজিতপুর, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর, নবীনগর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ) ৭০ জন পৌর কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প- প্রবৃদ্ধি (PRABRIDDHI) যা অর্থায়ন করছে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার, বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের রিজিওনাল এডভাইজর ড্যানিয়েল ভ্যালেঙ্গি, এবং সুইসকন্ট্যাক্ট PRABRIDDHI প্রকল্পের টিম লিডার পারভেজ মোহাম্মদ আশিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভৈরব পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীসহ ৩০০-এরও বেশি ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, ভৈরব পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক। সেমিনারে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেল, বিভিন্ন পৌরসভার কার্যক্রম, এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সফলতা উপস্থাপন করা হয়। ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়নে PRABRIDDHI প্রকল্পের ভূমিকা উপস্থাপনা করেন ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আল আমিন মিয়া, ARITS লিমিটেড- এর পরিচালক ও চিফ স্ট্রাটেজি অফিসার নূর আজম, পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (POPI)-SMART প্রকল্প এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. বাবুল হোসেন। এতে অংশগ্রহণকারীরা স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রক্রিয়া, পৌরসভার ভূমিকা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার কৌশলসমূহ সম্পর্কে মূল্যবান ধারণা লাভ করেন। পাদুকা শিল্প খাতের বিভিন্ন উদ্ভাবনী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (ILET)-এর তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত কয়েকটি মেশিনারিজের প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করা হয়, যা খাতটির বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে প্রযুক্তিগত বাধা দূর করতে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়।
প্রধান অতিথি জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর অন্যতম দায়িত্ব হলো বিনিয়োগ প্রমোশন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে আমরা উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। জাতীয় পর্যায়ে সংস্কার বাস্তবায়ন হলেও স্থানীয় পর্যায়ে এর সফলতা নির্ভর করে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রমের ওপর। প্রবৃদ্ধি প্রকল্প এই ব্যবধান কমাতে কাজ করছে। ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন ছাড়া স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করা সম্ভব নয়। শিল্পোন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করাই হবে টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।’
কিশোরগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপপরিচালক মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘আজকের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG) অর্জন এবং বিকেন্দ্রীকরণকে এগিয়ে নেওয়া। স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাংগঠনিক ও সামাজিক অংশীদারদের মধ্যে জ্ঞান বিনিময় এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলা আমাদের উদ্দেশ্য। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ৪% সুদে মৎস্য ঋণ প্রদান কার্যক্রম জেলা কৃষি কমিটি পরিচালনা করে থাকে, যা ভবিষ্যতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তার একটি কার্যকর মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’
সমাপনী বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি ভৈরব পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা ও জ্ঞান বিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান শুধু পৌরসভার পরিকল্পনা উপস্থাপনের একটি মঞ্চ নয়, বরং একে অপরের কাছ থেকে শেখা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের এক বাস্তব সুযোগ তৈরি করেছে।
ভৈরবের ঐতিহ্যবাহী পাদুকা শিল্পের সম্ভাবনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে এই খাত দেশীয় শীর্ষ শিল্পগুলোর কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। স্থানীয় ও জাতীয় সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টাই টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে দিনব্যাপী স্থানীয় পণ্য ও বাণিজ্য মেলা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়। স্থানীয় প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষ মেলায় অংশগ্রহণ করেন। নারী উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তারা নিজস্ব পণ্য ও সেবা প্রদর্শনসহ ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ পান। তাছাড়া মেলায় ভৈরব পৌরবাসী সরাসরি পৌরসভার বুথ থেকে ‘ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ সহ ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ ইত্যাদি বিভিন্ন নাগরিক সেবা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে পারে। দিনব্যাপী আয়োজনে স্থানীয় সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনা অংশগ্রহণকারীদের কাছে অনুষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
মন্তব্য করুন