মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ছাত্রসমাজ ও নতুন সরকারের কাছে দেশ পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাবনা

মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান। ছবি : সৌজন্য
মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান। ছবি : সৌজন্য

দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ সে সুযোগ করে দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন থেকে নতুন দল গঠন, সবই করতে হবে। পুরনো দলগুলো দিয়ে কতটুকু দেশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে, তা এখনই ঠিক বলা যাচ্ছে না। পুরনো দলগুলোকে আমাদের দেশের মানুষ ৪০ বছরের অধিক সময় ধরে দেখছে, কিন্তু তারা আমাদের দেশকে ফলপ্রসূ কিছু দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই, আমি ছাত্রসমাজ ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দেশ পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাবনা পেশ করছি-

১) ওয়ার্ড ভিত্তিক সরকার গঠন: দেশের অবকাঠামোতে পরিবর্তন নিয়ে এসে পুরো বাংলাদেশকে ১৫০০ ওয়ার্ডে ভাগ করে ফেলা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিধি হবে ৯৬ বর্গকিমি।

২) নির্বাচন ব্যবস্থা: দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে। ওয়ার্ড ভিত্তিক স্থানীয় সরকার গঠন করে দেওয়া হবে- যারা নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে। প্রত্যেক ওয়ার্ডের স্থানীয় সরকার প্রধানদের ভোটের ভিত্তিতে দেশে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন যার দায়িত্ব হবে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন এবং ওয়ার্ড সরকারগুলোর চেক-ব্যালেন্স ঠিক রাখা।

৩) রাজনৈতিক দল: দেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল থাকবে না। ওয়ার্ডগুলোর প্রধান নির্বাচন করার সময় দলগুলোকে আলাদা আলাদা প্রতীক বরাদ্দ করে দেওয়া হবে যাতে কোনো নির্দিষ্ট প্রতীক না থাকে। প্রতিটি ওয়ার্ড সরকারে থাকবেন ১২ জন উপদেষ্টা- ক) পরিকল্পনা, খ) সমাজকল্যাণ, গ) অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য, ঘ) আইন, ঙ) প্রযুক্তি, চ) পরিবেশ, ছ) শ্রমিক, জ) খাদ্য, ঝ) বস্ত্র, ঞ) বাসস্থান, ত) চিকিৎসা, থ) আনন্দ। এই ১২ জন উপদেষ্টার নিজেদের মাঝ থেকে একজনকে ওয়ার্ড সরকার প্রধান হিসেবে বেছে নিবেন।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থা:

৪) প্রতি বছরের শেষ মাসে পরবর্তী বছরের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবার মূল্য তালিকা ঠিক করে দেওয়া হবে। শ্রমিক ও ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের বিশেষ পাস দেওয়া হবে, যা দেখিয়ে তারা চিকিৎসা ও পরিবহন ছাড়া সব দ্রব্য ও সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাবেন।

৫) ৫ বছরের মাঝে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ৫০,০০০ টাকায় উন্নিত করা হবে। সে হিসেবে দেশের আয় প্রতি বছরে কমপক্ষে ৭৫০০,০০,০০,০০,০০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। দেশের সব মানুষের আয় নিশ্চিত করে বাড়তি টাকা দেশের উন্নয়নে ব্যয় হবে। সব ব্যবসায়ী একটি দ্রব্য বা সেবা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মুনাফা নিতে পারবেন। বাকি মুনাফা শ্রমিকদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে।

৬) দেশের সব জমির মালিকানা সরকারের থাকবে। সরকার কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রযুক্তির জন্য সবার প্রথমে জমি বরাদ্দ দেওয়া হবে। এরপর, অগ্রাধিকার দেওয়া হবে শিল্প-কারখানার জন্যে।

৭) প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা: দেশের নিয়মিত সামরিক বাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে এনে ভূমির সব নাগরিককে ১৬ বছর থেকে সামরিক শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হবে। প্রতিটি মহল্লা থেকে ওই ওয়ার্ডের জন্য পুলিশ সদস্য-সদস্যা নিয়োগ পাবেন।

৮) বাসস্থান ব্যবস্থা: সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে কোনো নাগরিকই ২টির বেশি ফ্ল্যাট রাখতে পারবেন না। ১৮ ঊর্ধ্ব প্রতিটি নাগরিকের জন্য হায়ার পারচেজ ভিত্তিতে ১০০ তলার বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট বরাদ্দ করা হবে।

৯) বস্ত্র ব্যবস্থা: প্রতিটি নাগরিককে প্রতি বছর ১টি টি-শার্ট, ১টি ফুলহাতা শার্ট, ২টি প্যান্ট, ১টি গেঞ্জি, ১টি মাফলার, ১টি চাদর, ১টি সোয়েটার এবং ১টি আন্ডারওয়ার দেওয়া হবে।

১০) স্বাস্থ্য ব্যবস্থা: সব শিশু, ও ষাটোর্ধ্ব নারী-পুরুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য-সুবিধা দেওয়া হবে।

১১) শিক্ষা ব্যবস্থা: সবার জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দিন ও রাতের কোর্স শুরু করা হবে। রিসার্চের উপর বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে স্কুল থেকে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। উচ্চশিক্ষার জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।

১২) পরিবহন ব্যবস্থা: পরিবহন ব্যবস্থা হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতে। শহরের জন্য বাস, আন্তঃশহরের জন্য ট্রেন ও লঞ্চ, বিদেশে ভ্রমণের জন্য উড়োজাহাজ এবং জরুরি কাজের জন্যে হেলিকপ্টার হবে বাহন। সব শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষার্থী এবং ষাটোর্ধ্ব নাগরিকের জন্য ফ্রি পরিবহন পাস দেওয়া হবে। নাগরিকরা প্রতি বছরের শুরুতে যাতে পরিবহন পাস সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক ভিত্তিতে কিনে নিতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৩) জ্বালানি ব্যবস্থা: দেশের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎশক্তি পারমাণবিক চুল্লি থেকে তৈরি হবে। খামারগুলোর জন্য সামুদ্রিক শৈবাল থেকে বায়ো-ডিজেল উৎপন্ন করা হবে, যেহেতু তা তৈরি করতে বেশি জায়গার দরকার হয় না।

১৪) পররাষ্ট্র ব্যবস্থা: দেশের বন্ধু রাষ্ট্র তৈরি করার ক্ষেত্রে শান্তিপ্রিয় দেশগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে জোট তৈরি করে ফ্রি ইকোনমিক জোন গঠন করা হবে।

এছাড়া:

১৫) ফরেন রিজার্ভের ফান্ড থেকে দেশের ও বিদেশের লাভজনক ব্যবসায় সরকার বিনিয়োগ করবে।

১৬) ব্যাংকের সুদের হার ২ শতাংশ করে দেওয়া হবে। সবাইকে ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কোনো ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট সুবিধা রাখা হবে না। বরং, আগ্রহীদের কাছ থেকে সরকার বিনিয়োগ নিয়ে লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ব্যবসায় বিনিয়োগ করবে।

১৭) বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ করবেন দেশের কোনো ব্যবসায়ীকে পার্টনার রেখে।

১৮) প্রতিটি ব্যবসায়িক সংস্থাকে করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি ফান্ডে নিজেদের মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে।

১৯) প্রবাসীদের দেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টানারশিপ ভিত্তিতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। তাদের পরিবারকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে।

মোহাম্মদ ফাছিহ-উল ইসলাম শাইয়্যান: আইটি উদ্যোক্তা

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুরাদনগরের ধর্ষণকাণ্ড : ফজর আলীর ছোট ভাইকে খুঁজছে পুলিশ 

মোস্তাফিজকে নিয়ে লঙ্কান শিবিরে বাড়তি সতর্কতা

রাবিতে সিওআইবির সহযোগিতায় অভিযান, আট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

বিএনপির দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ৪০

মার্কিন নৌবাহিনী ও ঘাঁটিতে গোপন মিশন, অতঃপর...

মার্কিন সহায়তা বন্ধে মৃত্যু ঝুঁকিতে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ

গুমের শিকার পারভেজের মেয়ের আকুতিতে কাঁদলেন তারেক রহমান

মুরাদনগরের সেই নারীর পরিবারের পাশে দাঁড়াল বিএনপি

‘ত্যাগের বিনিময়ে আমরা বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি’

ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময় : তারেক রহমান

১০

‘আবু সাঈদের নামে দিবস দিতে সমস্যা কোথায়?’ 

১১

শহীদের চেতনায় দেশকে উপলব্ধি করার আহ্বান তারেক রহমানের

১২

‘রাতের ভোটের’ দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন নুরুল হুদা

১৩

সাতক্ষীরার বৈষম্যবিরোধী নেতা সুহাইলের পদত্যাগ 

১৪

নকল সরবরাহ করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা আটক

১৫

এইচএসসির তৃতীয় দিনে অনুপস্থিত ২৪৮৯১ জন 

১৬

ক্ষমতাকেন্দ্রিক নয়, সংস্কারের পক্ষে জোট চায় এবি পার্টি

১৭

ব্রিটিশদের ‘নাকানিচুবানি’ দিতে ১০ বছর ধরে যে রণকৌশলে এগোচ্ছে ইরান

১৮

বাসযাত্রীর ব্যাগে মিলল বিপুল ইয়াবা, অতঃপর...

১৯

কুয়েট ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির জন্য ৬৮ অধ্যাপকের আবেদন

২০
X