গাজায় নির্বিচারে ত্রাণপ্রত্যাশীদের গুলি করছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কর্মীরা। কোনো রকম হুমকি সৃষ্টি না করলেও তাদের একের পর এক গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হচ্ছে। নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন সাবেক এক ঠিকাদার।
শুক্রবার (০৪ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় বিতর্কিত ও ইসরায়েল-মার্কিন সমর্থিত সহায়তা কেন্দ্র পরিচালনাকারী গাজা হিউমেনিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) এক সাবেক নিরাপত্তা ঠিকাদার বলেন, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন কীভাবে সহকর্মীরা নিরীহ, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর বারবার গুলি চালিয়েছেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে জানান, এসব মানুষ কোনো ধরনের হুমকি তৈরি করেনি, তবুও তাদের ওপর চালানো হয় মেশিনগান থেকে গুলি।
সাবেক এই কর্মী জানান, কয়েকজন নারী, শিশু এবং বৃদ্ধ ধীরে সরে যাওয়ায় একবার একটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে এক প্রহরী মেশিনগান দিয়ে গুলি চালান। তিনি বলেন, একজন ফিলিস্তিনি গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পাশের আরেক সহকর্মী মজা করে বলে, ‘তুই সম্ভবত একটাকে লাগিয়ে দিয়েছিস। এরপর তারা হেসে ওঠে।’
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছে। তারা একটি বিবৃতি উল্লেখ করে বলেছে, জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কখনোই কোনো বেসামরিক নাগরিকের ওপর গুলি চালানো হয়নি। তবে সাবেক কর্মীটির দাবি, তার অভিযোগকে কর্তৃপক্ষ ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দেয় এবং বলেন, লোকটা হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়ে গেছে বা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেছে।
জিএইচএফ মে মাসের শেষে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে কয়েকটি কেন্দ্র থেকে সীমিত ত্রাণ বিতরণ শুরু করে। এর আগে ইসরায়েল ১১ সপ্তাহ ধরে গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে, যার ফলে কোনো খাদ্য সেখানে প্রবেশ করতে পারেনি।
সংস্থাটির দাবি, অভিযোগকারী ব্যক্তি একজন ‘অসন্তুষ্ট সাবেক কর্মী’। তাকে ‘অসদাচরণের’ জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কর্মীর দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। দাবির পক্ষে তিনি প্রমাণস্বরূপ বিবিসিকে কিছু ডকুমেন্টও দিয়েছেন।
এই সাবেক কর্মী আরও বলেন, তিনি সংস্থাটির চারটি সাইটেই কাজ করেছেন এবং সেখানে কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। এক টিম লিডার বলেছিলেন, যদি হুমকি মনে করো, গুলি চালাও– মেরে ফেলো, পরে প্রশ্ন করো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহের শুরুতে অক্সফাম এবং সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ১৭০টির বেশি দাতব্য সংস্থা জিএইচএফ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে। সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিয়মিত ত্রাণপ্রত্যাশী ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ করছে।
ইসরায়েল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, জিএইচএফ-এর ব্যবস্থা হামাসের হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রয়োজনীয় মানুষদের সরাসরি সহায়তা প্রদান করছে। জিএইচএফ জানায়, তারা পাঁচ সপ্তাহে ৫২ মিলিয়নের বেশি খাবার বিতরণ করেছে।
মন্তব্য করুন