শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ড. মিল্টন বিশ্বাস
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ০১:১৭ পিএম
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন!

ড. মিল্টন বিশ্বাস। ছবি : সংগৃহীত
ড. মিল্টন বিশ্বাস। ছবি : সংগৃহীত

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের ১ তারিখ থেকেই বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন বাঙালি জাতির মুক্তির নিয়ন্তা। আর সেদিন থেকেই আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে উচ্চারিত- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল তার অসামান্য নেতৃত্বের উত্থান-পর্বের শেষ শীর্ষবিন্দু।

এ ভাষণেই তিনি সমস্ত বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা এবং যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলার মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনের সেই সশস্ত্র প্রত্যয়ই ঘোষিত হয়েছিল।

এমনকি ‘আমি যদি না-ও থাকি’ কিংবা ‘আমি যদি হুকুম দেবার না পারি’ উচ্চারণের মধ্যে ছিল জাতির মুক্তি আন্দোলনে নিবেদিত অন্যান্য নেতাকর্মী ও আপামর জনতার ওপর নির্ভর করার আত্মবিশ্বাস।

এ কারণেই ১২ মার্চ কর্নেল এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত কয়েক হাজার সৈনিক ও সেনা কর্মকর্তাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ গ্রহণ এবং ২০ মার্চ ছাত্র ইউনিয়নের ৫০০ ছাত্রছাত্রী নিয়ে গঠিত গণবাহিনীর ১০ দিনের ট্রেনিং শেষে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করা ছিল বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিক্রিয়ারই অংশ। অর্থাৎ সেদিন মুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্যে জনগণ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত হয়ে উঠেছিল।

বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাঙালিদের যে করতে হবে তাও তার দূরদৃষ্টিতে ধরা পড়েছিল। মূলত উত্তাল মার্চের ১ তারিখ থেকেই বাংলাদেশের প্রথম শাসক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি জান্তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে যে দ্রোহের আগুনে বাঙালি জাতি সেদিন জেগে উঠেছিল তার কেন্দ্র ভূমির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। তার নির্দেশ ছিল আদেশের মতো, আপামর জনগোষ্ঠী তা নির্দ্বিধায় মেনে নিয়েছিল; বিশ্ববাসীর সামনে তার প্রতি বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত আস্থা ছিল বিস্ময়কর। কারণ তারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হতে তখন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ।

আর ঘটনার বিচিত্র আবর্তে ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আপসহীন নেতা। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনীতির দর্শন ছিল মানবপ্রেম। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র শুরুতে আছে সেই প্রত্যয়- ‘একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা থেকে শুরু করে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পূর্বদিন পর্যন্ত দেশের গণমানুষের উন্নয়নের কথা বলেছেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ছিল তার রাষ্ট্রনীতি। তিনি সবসময় শোষিতের মুক্তি কামনা করেছেন। আজীবন সংগ্রামে যেমন তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি; তেমনি স্বাধীন দেশের সমাজকে সকল অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিল তার বলিষ্ঠ ভূমিকা।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা এবং ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগের ৬-দফা কর্মসূচিতেও শোষণের বিরুদ্ধে অবস্থান ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা বলেন।

তিনি দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আওয়ামী লীগের মাথা কেনার মতো ক্ষমতা পুঁজিপতিদের নেই।’ সদ্য স্বাধীন দেশে তিনি শোষণহীন সমাজ গড়ার জন্য ধৈর্য ধরে কাজ করার কথাও বারবার উল্লেখ করেন। আত্মজীবনীর বিবরণ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, সাতচল্লিশের দেশভাগের আগেই শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্রাত হন।

তিনি বলেছেন, দেশ ভাগের পর ভাষা-আন্দোলন ও ছয়দফা পর্যন্ত যদি বাংলার রাজনীতির গতিধারা বিশ্লেষণ করো, তাহলে দেখবে অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলার সুপ্ত চেতনার জন্ম সাতচল্লিশের বাংলাভাগের আগেই এবং সেই চেতনারই প্রথম বহিঃপ্রকাশ আটচল্লিশ সালেই অসাম্প্রদায়িক ভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আর ভাষা-আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতি করতে গিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা ও সংকটময় পথপরিক্রমা করতে হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে জনগণের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি সাহসের সঙ্গে; পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন দৃঢ় চিত্তে। তিনি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি- ‘রাজনীতির প্রকৌশলী নন মুজিব, মুজিব হচ্ছেন রাজনীতির কবি, বাঙালির স্বাভাবিক প্রবণতা প্রায়োগিক নয়, শৈল্পিক। তাই মনে হয়, বাংলাদেশের সকল মানুষ, শ্রেণি ও মতাদর্শকে এক সূত্রে গাঁথা হয়তো কেবল মুজিবের মতো রাজনৈতিক কবির পক্ষেই সম্ভব।’

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ’ উত্থানের পেছনে একাত্তরের মার্চ থেকে জেগে ওঠা বিদ্রোহী বাংলার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। ৩ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসমাবেশে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ’ করা হয়।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা–ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১০

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১১

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১২

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১৩

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৪

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৫

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৬

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

১৭

পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই : মঞ্জু

১৮

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখার জন্য শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন : স্বপন

১৯

ভুয়া ফটোকার্ড ও অপপ্রচারের অভিযোগে জিডি করলেন ছাত্রদলের আবিদ-মায়েদ

২০
X