মাছ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নদীমাতৃক এ দেশে ভাত-মাছ ছাড়া বাঙালির পেট ভরে না বললেই চলে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মরুর বুকে জন্ম নেওয়া আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও মাছ খেতেন এবং পছন্দ করতেন। জন্মভূমি মক্কা মরুভূমি ও পাহাড়ঘেরা হলেও আরবের চারপাশে রয়েছে বিশাল সমুদ্র। সেখান থেকেই মাছ এসেছে আরবদের খাদ্যতালিকায়। সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী আর হাদিসে মাছের প্রসঙ্গ স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনা হলো ‘আম্বার মাছ’-এর কাহিনি, যে মাছের বরকতে একসময় ক্ষুধার্ত তিনশত সাহাবি পেট ভরেছিলেন এবং পরে সেই মাছ থেকে খেয়েছিলেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও।
হাদিসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বোখারিতে এসেছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আমরা জাইশুল খাবাতের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আবু উবাইদাকে (রা.) আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। পথে আমরা ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ি। তখন সমুদ্র আমাদের জন্য একটি মরা মাছ তীরে নিক্ষেপ করে দিল। এত বড় মাছ আমরা আর কখনো দেখিনি, একে আম্বার মাছ বলা হয়। এ মাছটি থেকে আমরা অর্ধ মাস আহার করলাম। একবার আবু উবাইদা (রা.) মাছটির হাড়গুলোর একটি হাড় তুলে ধরলেন আর সওয়ারির পিঠে চড়ে একজন হাড়টির নিচ দিয়ে অতিক্রম করল।’
ইবনে জুরায়েজ বলেন, আবু জুবায়ের (রহ.) আমাকে জানিয়েছেন, তিনি জাবির (রা.) থেকে শুনেছেন যে, ওই সময় আবু উবাইদা (রা.) বলেছেন, তোমরা মাছটি আহার করো। এরপর আমরা মদিনায় ফিরে এলে নবীজিকে (সা.) বিষয়টি অবগত করি। তিনি বলেন, খাও। এটি তোমাদের জন্য রিজিক, আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়ে দিয়েছেন। আর তোমাদের কাছে কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাদেরও খাওয়াও। মাছটির কিছু অংশ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এনে দেওয়া হয়। তিনি তা খেলেন।’
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের জন্য দুটি মৃত জীব হালাল করা হয়েছে, মাছ ও টিড্ডি।’
হাদিসে নবীজি (সা.) যে মাছটি খেয়েছেন, তাকে আম্বার মাছ বলা হয়েছে। এর দুটি কারণ হতে পারে। এক, তা থেকে আম্বার গন্ধদ্রব্য বের করা হয়। দুই, একধরনের মাছের নাম আম্বার। আরবিতে আম্বার বলা হয় বড় মাথাবিশিষ্ট দাঁতওয়ালা একপ্রকার দীর্ঘকায় তিমি মাছকে।
সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনার এ মাছটি ছিল আল্লাহর রহমত। যুদ্ধরত তিনশত সাহাবির খাবার সংকট দেখা দিলেই আল্লাহ এ মাছ তাদের দিয়েছিলেন। মাছটি এত বড় ছিল যে, একবার আবু উবাইদা (রা.) তেরোজনকে নিয়ে মাছের একটি চোখের কোটরে বসিয়ে দিয়েছিলেন। আর তার পাঁজরের একখানি হাড় নিয়ে দাঁড় করালেন। সবচেয়ে বড় উটটার উপর হাওদা চাপিয়ে তার নিচ দিয়ে পার করে দিলেন। এত বড় সমুদ্রের এ মাছ থেকে বরকত হিসেবে নবীজিও খেয়েছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সমুদ্রের পানি বিশুদ্ধ ও সমুদ্রের মৃত প্রাণী হালাল।।
উৎস : নবীজির প্রিয় ১০০
তথ্যসূত্র
বোখারি : ৪৩৬২, ইবনে মাজাহ : ৩২১৮ ফাতহুল বারি : ৮/৮০, মুসলিম : ১৯৩৫, তিরমিজি : ২৪৭৫
মন্তব্য করুন