আগামীকাল মহালয়া। এই দিনটিকে সাধারণভাবে আমরা পিতৃপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন হিসেবে জানি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লোকরীতির হাত ধরে এই দিনে যোগ হয়েছে দুর্গাপূজার ছোঁয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার সত্যিই কি কোনো সরাসরি সম্পর্ক আছে?
চলুন তার আগে জেনে নিই মহালয়া কী।
মহালয়া আসলে কী?
মহালয়া হলো এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ— যেখানে পিতৃপক্ষ (পূর্বপুরুষদের তর্পণের সময়) শেষ হয় এবং দেবীপক্ষ (দেবী দুর্গার আরাধনার সময়) শুরু হয়। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার পরদিন থেকে শুরু হয় পিতৃপক্ষ, আর তা শেষ হয় অমাবস্যায়, অর্থাৎ মহালয়ার দিন।
এই দিনে গঙ্গাস্নান করে, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে পিণ্ড ও জলদান করে তাদের স্মরণ করা হয়। একে বলা হয় ‘তর্পণ’। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে মৃত আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসেন তাদের প্রিয়জনদের দেখতে। তাই তাদের শান্তি ও সন্তুষ্টির জন্যই এই রীতি।
‘মহালয়া’ শব্দের মানেই হলো ‘মহৎ আলয়’— যেখানে পিতৃপুরুষরা থাকেন। শুধু বাবা-মা বা দাদু-ঠাকুরদারাই নন, সব পূর্বপুরুষ এবং এমনকি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, সপ্তর্ষি ও ভীষ্মকেও তর্পণ করা হয়।
তবে দুর্গাপূজার সঙ্গে এর সম্পর্ক কী?
আসলে, পুরাণ বা শাস্ত্র অনুযায়ী মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজার সরাসরি কোনো যোগ নেই। কারণ, দুর্গাপূজা শুরু হয় মহালয়ার আগেই— কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমীর পরদিন দেবীর ‘বোধন’ হয়, যেটি ‘কৃষ্ণনবম্যাদি কল্পারম্ভ’ নামে পরিচিত।
এই সময় থেকেই দেবীপূজা শুরু হয়। বহু পুরোনো রাজবাড়ি বা বনেদি বাড়িতে এখনো এই নিয়মে পূজা হয়।
তাহলে আমরা মহালয়াকে দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে ভাবি কেন?
এর পেছনে রয়েছে মূলত লোকাচার ও সংস্কৃতির প্রভাব। ভোরবেলায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান, দেবীর চোখ আঁকা, মণ্ডপে প্রতিমা পৌঁছানো— সব কিছুই মিলেমিশে মহালয়ার দিনটিকে দুর্গাপূজার এক ‘শুভ সূচনা’র রূপ দিয়েছে।
আর ‘মহালয়ার সাত দিন পরেই দুর্গাপূজা’— এই সহজ বাক্যটি বাঙালির মনে মহালয়া আর দুর্গাপূজাকে একসঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। ফলে আমরা সবাই মহালয়াকে দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা বলেই ধরে নিই।
যদিও শাস্ত্রমতে মহালয়া আর দুর্গাপূজার মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই, তবে এই দিন থেকেই পূজার আমেজ শুরু হয়। পরদিন প্রতিপদ থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয় আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক পক্ষকালব্যাপী দেবী আরাধনা— দুর্গাপূজা, নবরাত্রি, লক্ষ্মীপূজা ইত্যাদি মিলিয়ে।
তাই বলা যায়, মহালয়া যেন দুর্গাপূজার সূর্যোদয়ের ঘণ্টা— সম্পর্ক না থাকলেও, অনুভবটুকু একদম আলাদা।
মন্তব্য করুন