রোজাদারদের জন্য ঈদুল ফিতর নিয়ে আসে আনন্দ ও উৎসব। একইসঙ্গে নিয়ে আসে আল্লাহর নৈকট্যলাভের সুযোগ। তাই এ রাত যেমনি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ফজিলতমণ্ডিত। এ রাতে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইবাদত করেছেন। একাধিক হাদিসেও ঈদের রাতে ইবাদত করার গুরুত্ব, মাহাত্ম্য এবং ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন,
যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জাগবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর মরবে না।
ঈদের রাতের আরেকটি বড় প্রাপ্তি হলো, এ রাতে দোয়া কবুল করা হয়। কোনো দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। বরং আল্লাহতায়ালার দরবারে তা সরাসরি কবুল হয়।
পবিত্র রমজানের ইবাদতের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় করা অন্যতম একটি ইবাদত। ঈদের (নামাজ) আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। রমজানের রোজার ভুলত্রুটি পরিপূর্ণতার জন্যই এটি আবশ্যক করা হয়েছে। সদকাতুল ফিতর হলো নামাজের সিজদায়ে সাহুর মতো।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোজা পালনকারীর জন্য সদকাতুল ফিতর আদায় অপরিহার্য করে দিয়েছেন, যা রোজা পালনকারীর অনর্থক, অশ্লীল কথা-কাজ পরিশুদ্ধকারী ও অভাবী মানুষের জন্য আহারের ব্যবস্থা। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)
মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ তথা নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়াটি পাঠ করতেন— আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল য়ুমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম; রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৬)
ঈদের রাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতমণ্ডিত। ঈদের রাতে নফল ইবাদত করার মাধ্যেমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মহাসুযোগ তৈরি হয়।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য দুই ঈদের রাত জেগে ইবাদতে করবে, কিয়ামতের কঠিনের দিনেও তার অন্তর মরবে না, যেদিন ভয়ংকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতির কারণে মানুষের অন্তর মারা যাবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)
সালাতুল তাসবিহ নামাজ আদায়ে বিগত জীবনের গোনাহ মাফ হওয়া ও বিপুল সাওয়াব লাভ করা যায়। নফল নামাজগুলোর মধ্যে সালাতুতু তাসবিহ অন্যতম। প্রত্যেক রাকাআতে ৭৫ বার তাসবিহ আদায়ের মাধ্যমে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।
সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা মেলানোর পাশাপাশি প্রত্যেক রাকাআতে (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) অর্থাৎ সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার-এ তাসবিহটি ৭৫ বার পড়তে হবে। তবে একই নিয়মে ৪ রাকাআতে মোট ৩০০ বার তাসবিহ পড়ার মাধ্যমে তা আদায় করতে হয়।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১৫ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) ১০ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
(سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَلَا اِلهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ) পড়ুন- ১০ বার।
এভাবে দ্বিতীয় রাকাআতে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাআতে মতো এ নামাজ আদায় করা। দুই রাকাআতের পর বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে উপরের নিয়মে বাকি ২ রাকাআত আদায় করে নেয়া।
ঈদের রাতে ও দিনে স্ত্রী-সহবাস করতে কোন বাধা নেই। বরং এ দিনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিলন করা অন্য সময়ের মতোই সাওয়াব হিসেবেই পরিগণিত হবে। তবে রমজানে দিনের বেলায়ে এবং হজ কিংবা উমরার ইহরাম অবস্থায় হারাম। এবং নারীরা হায়েজ বা নিফাস অবস্থায় বৈধতা নেই।
মন্তব্য করুন