৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিসিবির আসন্ন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন তিনি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনীত হয়েই বিসিবিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন তিনি—সিলেট স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার এ কথা নিজেই জানিয়েছেন তিনি। যদিও শুরুতে গুঞ্জন ছিল, অভিজ্ঞ ক্রিকেট সংগঠক সৈয়দ আশরাফুল হককে বিসিবিতে ফিরিয়ে আনতেই বোর্ডের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছিল বুলবুলকে; কিন্তু তিন মাসে সেসব হিসাব বদলে গেছে। এখন আশরাফুল হকের অতি বিশ্বস্ত বুলবুল নিজেই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ে ঘোষণা দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে শীর্ষ পদের লড়াইয়ে ক্লাবগুলোর সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তামিম ইকবালকে দেখতে পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে। তবে আরেক প্রভাবশালী সংগঠক মাহবুব উল আনাম নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বদলে যাবে সব হিসাব-নিকাশও।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে বিসিবি। তার আগেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে ঢাকার ক্লাবগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে মুখোমুখি দ্বন্দ্বে বুলবুলের নেতৃত্বাধীন বোর্ড। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্লাবগুলো। দ্রুত সমাধানের পথে না হাঁটলে কঠোর হতে পারে ঢাকার প্রভাবশালী ক্লাবগুলো। বোর্ড সভায় জানানো হয়েছিল, নির্বাচন কমিশন তৈরি করবেন প্রেসিডেন্ট নিজেই। কিন্তু ক্লাবগুলো মনে করছে, এতে স্বার্থ সংঘাত ঘটতে পারে। বুলবুলের ইচ্ছায় সরকারি আমলা দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তাতে দেখা যাবে স্বার্থের সংঘাত। তাই ক্লাবগুলোর দাবি, বিসিবির কাউন্সিলরদের নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। আর সেটি করা হলে স্বচ্ছতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন থাকবে না ক্লাবগুলোর। কমিশন গঠনে সমঝোতা না হলে বিসিবির আসন্ন নির্বাচন ঘিরে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করবে সেটি নিশ্চিত।
অক্টোবরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন কে—সে প্রশ্নে বুলবুল ও তামিমের নামই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনায়। সরকারের পছন্দ হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বুলবুল, সেটা সিলেটে গতকাল আরও স্পষ্ট করে দিলেন তিনি, ‘এখানে (বিসিবিতে) সভাপতি নির্বাচন হয় না, পরিচালকদের নির্বাচন হয়। সেটা প্রথম লক্ষ্য এবং সেখানে থাকার চেষ্টা করব—পরবর্তী সময়ে যদি সুযোগ হয়, আমি চেষ্টা করব যেভাবে হোক বাংলাদেশকে সার্ভ করার জন্য।’
এক্ষেত্রে বুলবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন তামিম। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন সাবেক এ অধিনায়ক। বুলবুলের এমন ঘোষণার পর ক্লাবগুলোর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে তামিমের জন্য ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ক্লাবগুলো। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জড়িত একাধিক অভিজ্ঞ সংগঠক কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন, মাহবুব উল আনাম শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না লড়লে ক্লাবগুলোর প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট পদে তামিমকে সমর্থন দেবে। সেইসঙ্গে তামিমের ওপর দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের সুদৃষ্টিও বাড়তি মনোযোগ তৈরি করছে। সে কারণে নাকি সম্প্রতি ক্রীড়া প্রশাসনের পছন্দ থেকে অনেকটা দূরেই সরে গেছেন তামিম। প্রকারান্তে বুলবুলের ওপর আস্থা বেড়েছে ক্রীড়া প্রশাসনের। যদিও পরিচালকদের ভোটের হিসাবই বলে দেবে বোর্ড সভাপতি হিসেবে তাদের ভাগ্য!
বিসিবি নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দ্রুতই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে জেলা ও বিভাগীয় কাউন্সিলরদের নাম। একই সঙ্গে ঢাকার ৭৬টি ক্লাবের কাউন্সিলরের নাম প্রকাশ পাবে। ক্লাবের ৭৬ ভোট থেকে ১২ জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে বিসিবিতে আসবেন। তাদেরই একজন হতে পারেন তামিম। অন্যদিকে বিভাগগুলো থেকে বোর্ডে আসবেন ৮ জন; এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন। একজন আসবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক ক্রিকেটার ক্যাটাগরি থেকে। এ ছাড়াও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) হয়ে থাকবেন আরও দুজন। বোর্ড সভাপতি হতে হলে সেই দুজনের একজন হতে হবে বুলবুলকে। এই ২৩ জনের ভোটেই নির্বাচিত হবেন পরবর্তী বিসিবি প্রেসিডেন্ট। সেখানে ক্লাবগুলোর ১১ ভোটেই তামিমের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য ক্যাটাগরি থেকেও তামিমের পক্ষে ভোট যেতে পারে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তারা বলছে, ঢাকার ক্লাবগুলোর ওপরই নির্ভর করে চলে দেশের ক্রিকেট। তাই বিভাগীয় প্রতিনিধিদের আস্থাতেও সব সময় থাকে ঢাকার ক্লাব। এই কারণে বিসিবির ভোটের হিসাবে তারতম্য ঘটে সবসময়।
মন্তব্য করুন