বর্ণবাদের থাবা বর্তমানে সমাজের সব স্তরেই বিদ্যমান। আর ক্রীড়াঙ্গনে বর্ণবাদের থাবা বেশ পুরোনো। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ফুটবলে অহরহই দেখা যায় নিন্দনীয় এই ঘটনা। বিভিন্ন ফুটবল সংস্থার নানা চেষ্টা ও উদ্যোগের পরও ফুটবলকে বর্ণবাদমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না; বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আক্রমণ তীব্র থেকে তীব্র হয়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া ২০২২-২৩ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে কেন্দ্র করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বর্ণবাদ। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন ব্রাজিলিয়ান এই উইঙ্গার। আর বিষয়টি সব সীমা অতিক্রম করে যায় মৌসুমের শেষ দিকে, ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচে। সেদিন ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ভ্যালেন্সিয়ার সমর্থকদের বর্ণবাদী আচরণ হতবাক করে ফুটবলবিশ্বকে। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেন সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো থেকে শুরু করে বাংলাদেশের নারী ফুটবলার সানজিদা খাতুন—সবাই ভিনিসিয়ুসের পক্ষে অবস্থান নেন।
ফিফা সভাপতি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বর্ণবাদ বিষয়ে আরও কঠোর হবেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ফিফা বর্ণবাদবিরোধী কমিটি ঘোষণা করলেন তিনি। আর সেই কমিটির প্রধান করা হয়েছে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বিশেষ এই কমিটি ফুটবলে বৈষম্যমূলক যে কোনো আচরণের ঘটনায় কঠোর শাস্তির পরামর্শ দেবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বিশেষ এই কমিটির কথা নিশ্চিত করেছেন ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনো। ব্রাজিল জাতীয় দল ও ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফিফা সভাপতি বলেছেন, ‘ফুটবলে আর কোনো বর্ণবাদ থাকতে দেব না। এটা হলেই ম্যাচ বন্ধ করে দিতে হবে। অনেক হয়েছে এসব।’
ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে আলাপ করেই এই কমিটি করার কথা জানিয়ে ফিফা সভাপতি বলেন, ‘আমি ভিনিসিয়ুসকে বলেছি, খেলোয়াড়দের দলটির নেতৃত্ব দিতে; যারা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির প্রস্তাব করবে। যা পরে বিশ্বব্যাপী ফুটবল কর্তৃপক্ষগুলো বাস্তবায়ন করবে। আমাদের খেলোয়াড়দের কথা শুনতে হবে। নিরাপদ পরিবেশের জন্য আমাদের কী দরকার, তা জানতে হবে। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই মনোযোগী।’
লম্বা সময় ধরে বর্ণবাদ ফুটবল অঙ্গনে মাথাব্যথার কারণ হলেও সেটি দূরীকরণে কোনো উদ্যোগই কার্যকর ফল বয়ে আনেনি। ফিফা অবশ্য এবার কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলছে। এখন দেখার বিষয় তা কতটুকু ফল বয়ে আনে।
এর আগে ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে ভিনির বিরুদ্ধে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান ইনফান্তিনো। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। ফুটবল বা সমাজে বর্ণবাদের স্থান নেই। যেসব খেলোয়াড় এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়বে, ফিফা তাদের পাশে থাকবে। ভ্যালেন্সিয়া-রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের ঘটনাগুলো দেখাচ্ছে যে বিষয়টি এভাবেই হওয়া দরকার। যে কারণে ফিফা প্রতিযোগিতায় তিন ধাপ প্রক্রিয়া চালু আছে, যা সব ধরনের ফুটবলে প্রচলনের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ম্যাচটি বন্ধ করা।’
ভিনিসিয়ুসের ঘটনার পর ব্রাজিলও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। এরই মধ্যে তার নামে আইনও অনুমোদন পেয়েছে ব্রাজিলে। শুধু এটুকুই নয়, ভিনির সঙ্গে হওয়া বর্ণবাদী আচরণের প্রতিবাদে প্রীতি ম্যাচও খেলতে যাচ্ছে ব্রাজিল। ১৭ জুন বার্সেলোনায় প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ গিনি এবং ৩ দিন পর ২০ জুন পর্তুগালের লিসবনে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রতিপক্ষ সেনেগাল। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ভিনিসিয়ুসের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে স্পেনের বিপক্ষে বর্ণবাদের প্রতিবাদস্বরূপ ম্যাচ খেলবে ব্রাজিল।
মন্তব্য করুন