প্রতিভা হচ্ছে সাধনা, পরিশ্রম এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে সেই মানসিক ও শারীরিক শক্তি, যা দিয়ে মানুষ অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর কাজ সহজেই করে ফেলতে পারে। আর এই প্রতিভা থেকেই সৃজনশীলতার জন্ম।
প্রতিভা কখনো লুকিয়ে বা আটকে রাখা যায় না। কোনো না কোনোভাবে তা বেরিয়ে আসবেই। আর কখন কীভাবে তার বিচ্ছুরণ ঘটে, তা কেউ টের পায় না। না হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে একটি স্কুল বাস্কেটবল টুর্নামেন্টে এক মুসলিম কন্যা কোর্টে নেমে জাদু দেখাতেই বাজিমাত!
জামাদ ফিন নামের ২৩ বছর বয়সী তরুণী বোরকা পরে কোর্টে নেমে একের পর এক বল বাস্কেট করছেন। তা দেখে হতবাক সবাই, কোথায় ছিলেন তিনি এত দিন? রক্ষণশীল পরিবারের মুসলিম কন্যা, তাও আবার বোরকা পরে, সকলের সামনে খেলবে, লাফাবে—কারই বা পছন্দ হয়।
আমেরিকায় বড় হওয়া এই সোমালিয়ান পাশে পেয়েছেন তার পরিবারকে। তাই তো মনের আনন্দে খেলে চলেছেন। এমনকি পুরুষদের সঙ্গেও পাল্লা দিয়ে কোর্টে নেমে বাস্কেট করছেন সহজাত ভঙ্গিতে।
জামাদ ফিনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তার ভাতিজা। মুহূর্তের সারা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে পড়ে সেই ভিডিও। এতে প্রকাশ পায় জামাদের প্রতিভা। তার বাসার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েন গণমাধ্যমকর্মীরা। এক সাক্ষাৎকার তিনি জানান, মুসলিম নারী হিসেবে বাস্কেটবল খেলা তার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই বাস্কেটবল পছন্দ করি। কিন্তু একজন মুসলিম নারী হিসেবে এই খেলার চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে পরামর্শ নেবে, এমন কেউ ছিল না আমার পাশে। তাই সবকিছু আমাকে করতে হয়েছিল। তবে বড় কথা, আমার পরিবার আমার সঙ্গে ছিল। তাই মাথার স্কার্ফ পরে বাস্কেটবল খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ আমার ভালোবাসার জিনিসটাকে ছাড়তে চাইছিলাম না।
তিনি আরও বলেন, তিনি চান বিশ্বের বাকি নারীদেরও তাকে দেখে ভয় কেটে যাক, ‘আমাকে দেখে বিশ্বের বাকি নারীদের মধ্যে থেকে ভয় কেটে যাবে। আমি যদি পারি, তা হলে অন্যরা কেন পারবে না। আমি তো গৎবাঁধা জীবনের বাইরে গিয়ে সবার সামনে খেলতে পারছি, অন্যদের উৎসাহিত করতে পারছি, তা হলে অন্যরাও পারবে।’
সবচেয়ে বড় কথা, মুসলিম নারীদের সংস্কৃতি বজায় রেখে খেলে চলেছেন জামাদ। এমনকি তিনি মুসলিম ভাবধারাকে অসম্মান করেননি। জামাদ প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়। এমনকি বোস্টনে চালু করেছেন নিজস্ব বাস্কেটবল ক্লিনিক। সেখানে ছেলেদের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ নেন নারীরাও।
এটাকেই নিজের সার্থকতা হিসেবে দেখছেন তিনি, ‘এটাই সার্থকতা। আমার দেখাদেখি ইমানুয়েল কলেজে বহু মুসলিম মেয়ে বাস্কেটবল ছাড়াও নানা খেলার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। ভালো লাগছে, আমার লড়াই অবশেষে সার্থকতা পেয়েছে।’
জামাদ আরও জানান, স্বভাবগতভাবে তিনি লাজুক। কিন্তু তিনি আরও বিখ্যাত হতে চান। তবে অব্যশই তা মুসলিম রীতি মেনেই।
মন্তব্য করুন