কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০২:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চিকিৎসাক্ষেত্রে চীনা বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী সফলতা

চীনা বিজ্ঞানীরা এবার আবিষ্কার করেছেন এক রহস্যময় ‘জেনেটিক সুইচ’। ছবি : সংগৃহীত
চীনা বিজ্ঞানীরা এবার আবিষ্কার করেছেন এক রহস্যময় ‘জেনেটিক সুইচ’। ছবি : সংগৃহীত

ভাবুন তো, শরীরের কোনো অঙ্গ কেটে গেলে তা আবার আগের মতো গজিয়ে উঠছে। ধরুন আপনার হাত বা পা কেটে গেছে। কিন্তু আপনার শরীর নিজে নিজেই সেই ক্ষতস্থান সারিয়ে তুলছে। গল্পের মতো শোনালেও এবার বিজ্ঞান সেই পথে আগাচ্ছে। তবে এখনো এটি গবেষণাগারেই ইঁদুরের ওপর সফলতা পেয়েছে। মানবদেহে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ এখনো সময়সাপেক্ষ বিষয়।

চীনা বিজ্ঞানীরা এবার এক যুগান্তকারী গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইঁদুরের কানের ক্ষত পুনর্গঠনের পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় ‘জেনেটিক সুইচ’। এবং তারা সেই সুইচ অন করে দেখিয়েছেন, অঙ্গ পুনর্জন্ম শুধু কল্পনা নয়, এটি বাস্তবেও সম্ভাব।

এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ। এতে জানানো হয়, ইঁদুরের কানে ফুটো অংশ আবার নতুন করে গজিয়েছে, একেবারে ভেতরের কার্টিলেজসহ! এমন প্রমাণ আগে কখনও মেলেনি।

গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী ওয়াং ওয়ে, বর্তমানে বেইজিংয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিকাল সায়েন্সের সহকারী গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাচ্ছি কীভাবে ইঁদুররা তাদের বিবর্তনের পথে এই পুনর্জন্মের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো জৈবিক কারণ আছে।’

গবেষণা বলছে, অঙ্গ পুনর্জন্মে মূল চাবিকাঠি এক রাসায়নিক ‘রেটিনয়িক অ্যাসিড’, যা তৈরি হয় ভিটামিন-এ থেকে। এটি শরীরের কোষকে নির্দেশ দেয়, কোথায় কীভাবে গঠন হতে হবে। আর এই উপাদানটি উৎপাদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিন কাজ করে।

তিন বছর ধরে কাজ করেছেন ওয়াং ও তার দল। প্রতিবার নতুন জিনের পরীক্ষা করেও ফল না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। অনেক সময় কিছু জিন ক্ষত সারানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। অবশেষে একদিন মিলল সেই কাঙ্ক্ষিত জিন। এটি রেটিনয়িক অ্যাসিড তৈরির কৌশল জানে।

ওয়াং বলেন, ‘একটা মাত্র জিন এত বড় পরিবর্তন আনতে পারে তা দেখে আমরা রীতিমতো অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।’

এই গবেষণায় ব্যবহার হয়েছে স্টেরিও-সিক নামের এক অভিনব প্রযুক্তি, যাকে গবেষকেরা বলেন ‘জীবনের ক্যামেরা’। এটি শুধু কোষের ছবি তোলে না, বরং দেখে কোন জিন কখন ও কিভাবে কাজ করছে।

সহ-গবেষক ডেং জিচিং, বিজিআই রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, বলেন, ‘এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা খুঁটিনাটি বুঝতে পেরেছি- আসলে কোন ধাপে কী ঘটছে। এটা যেন অঙ্গ পুনর্জন্মের পুরো মানচিত্র খুলে দিল।’

তবে এখনো পথ অনেক বাকি। মানুষের অঙ্গ ইঁদুরের মতো ছোট নয়। হৃৎপিণ্ড, মেরুদণ্ড বা লিভার- সবই জটিল এবং বিশাল। এবং একেক অঙ্গে একেক রকম সংকেতপ্রক্রিয়া কাজ করে।

ওয়াং বলেন, ‘এই গবেষণা প্রমাণ দিয়েছে, জিনগত একটি সুইচ সত্যিই আছে, যা অঙ্গ পুনর্জন্ম চালু করতে পারে। এবার আমাদের কাজ, অন্যান্য অঙ্গের সেই সুইচগুলো খুঁজে বের করা।’

মানবদেহে এ প্রয়োগ এখনো সময়সাপেক্ষ হলেও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, একদিন হয়তো পঙ্গু মানুষকেও নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে তাদের এ গবেষণা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু স্থগিতের প্রতিবাদে শহীদুল্লাহ হল থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল

ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে কী হবে জানালেন শিশির মনির

মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশির মৃত্যু

দুধ দিয়ে গোসল করে জুয়া খেলা ছাড়লেন যুবক

শিশুদের জন্য লবণ কতটুকু প্রয়োজন, যা বলছেন পুষ্টিবিদ

ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন কবে, জানিয়ে দিল বিসিবি

এক ওভারে দিলেন ৪৩ রান, করলেন ১৩ বল

কারামুক্ত হয়ে গানে ফিরছেন নোবেল

১৪ বছর ব্যাংকে চাকরির পর এখন ফুটপাতে করছেন ভিক্ষা

ওয়ালটন লিফটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন সংগীতশিল্পী তাহসান

১০

নখ কাটলে কি অজু ভেঙে যায়?

১১

সেনাপ্রধানের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে বিবৃতি

১২

ডাকসু নির্বাচন স্থগিত

১৩

মাদক মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন

১৪

অবাধে চলছে সংরক্ষিত বনের গাছ উজাড়

১৫

গেইল-পোলার্ডের এলিট ক্লাবে হেলস

১৬

আফগান মানুষ পাচারকারীদের অভিযান নিয়ে ‘ওয়েকিং আওয়ার্স’

১৭

জামায়াত নেতাদের জরুরি বৈঠক

১৮

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর শোক

১৯

বায়তুশ শরফ স্বর্ণপদক পাচ্ছেন জবি শিক্ষক ড. মো. ইব্রাহীম খলিল

২০
X