

স্বপ্নপূরণের আসায় যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে ঘর ছাড়ে মানুষ সেই ভূমধ্যসাগরই কখনো পরিণত হয় সলিল সমাধিতে। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর অদম্য বাসনা এবং এক উন্নত ভবিষ্যতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা এই স্বপ্নপূরণের দুর্বার নেশা তাদের ঠেলে দেয় এক চরম মরণফাঁদের দিকে। আর তা হলো ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রা।
জীবিকার তাগিদে চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে, জীবন বাজি রেখে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেন অনেকে। কেউ কেউ হয়তো সৌভাগ্যক্রমে সেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হন, কিন্তু বেশিরভাগেরই জীবনের পথ থেমে যায় মাঝপথেই।
সম্প্রতি এই ভয়াবহ চিত্রটি আরও একবার সামনে এলো। লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল-খুমস উপকূলে প্রায় ১০০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বহনকারী দুটি নৌকা ইউরোপের পথে সাগরে নেমেছিল। কিন্তু মাঝপথেই সলিলসমাধি ঘটল একটি নৌকার। চোখের পলকে ভূমধ্যসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে উলটে গেল সেই স্বপ্নযাত্রা। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে চারজন বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটেছে।
প্রথম নৌকাটিতে আরোহী ছিলেন ২৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। বাকিদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা। ত্রিপোলির উপকূলীয় এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই ইউরোপমুখী অনিয়মিত অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট রুট হিসেবে পরিচিত, আর তাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নিয়মিতই এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে, যা ইউরোপীয় দেশগুলোরও গভীর উদ্বেগের কারণ। এখানে প্রশ্ন হলো লিবিয়া কেন হয়ে উঠলো ট্রানজিট রুট?
লিবিয়াকে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার একটি পরিচিত ও জনপ্রিয় রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ২০১১ সালে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, দেশটি ইউরোপগামী অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়।
একসময় গাদ্দাফির শাসনামলে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা সহজে কাজ পেত। কিন্তু তার পতনের পর দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮ লাখেরও বেশি অভিবাসী লিবিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলি জানিয়েছে, লিবিয়ায় আশ্রয় নেওয়া এই শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিতভাবে স্থানীয় মিলিশিয়াদের হাতে চরম নির্যাতন, ধর্ষণ এবং চাঁদাবাজির শিকার হন।
অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে বিভিন্ন সরঞ্জাম ও অর্থসহায়তা দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অভিযোগ উঠেছে যে এই কোস্টগার্ডের সঙ্গেই নির্যাতন ও অপরাধে জড়িত মিলিশিয়াদের সম্পর্ক রয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লিবিয়া উপকূলে একের পর এক নৌডুবিতে বহু অভিবাসীর প্রাণহানি ঘটায়, জাতিসংঘের সভায় বেশ কয়েকটি দেশ লিবিয়ার অভিবাসী আটককেন্দ্রগুলো বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন