মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক বন্ধন ছাড়া কোনো মানুষ একা বাঁচতে পারে না। এই সামাজিক ধারণা থেকে সামনে এসেছে নতুন খবর। অপরিচিত তরুণ সঙ্গীর খোঁজ করছেন চীনের নারীরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার সময় মানুষের আয়ে ভাটা পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা তাদের আয়ের অর্ধেক বেতন পেতেন। এতে করে বিপাকে পড়েন তারা। এরপর সঙ্গী খোঁজার এ ধারণা চীনে জনপ্রিয়তা পায়।
চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফুজিয়ানের বাসিন্দা ক্যাথি ঝুঁ জানান, করোনার সময় তার স্বামী ও তিনি দুজনেই অর্ধেক বেতন পেতেন। এতে করে বিপাকে পড়েন তারা। মায়ের আগে থেকে ক্যানসার শনাক্ত হওয়ায় এ আয় দিয়ে খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা।
ক্যাথি জানান, বছরের শেষে আমাদের হাতে অল্পকিছু অর্থ থাকত। ফলে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। অর্থিক এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের খরচ যোগাতে অনলাইনে সঙ্গী খুঁজতে চীনা তরুণদের ‘দ্য জি’ প্রবণতায় যোগ দেন। এখানে তিনি একসঙ্গে ভ্রমণ বা ব্যায়ায়ের পরিবর্তে অর্থ সঞ্চয় করতে আগ্রহী এমন ব্যক্তিকে সঙ্গী করেন।
মান্দারিন ভাষার শব্দ ‘দ্য জি’। যার অর্থ সবকিছু মিলে যেতে পারে। এটি মূলত লিঙ্গ-নির্বিশেষে সঙ্গী নির্বাচনের একটি পরিভাষা। এর মাধ্যমে পূর্বপরিচয় ছাড়াই সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করা হয়। চীনের তরুণরা জটিলতা এড়াতে অস্থায়ী সঙ্গী খোঁজেন। এক্ষেত্রে লিঙ্গ বা ব্যক্তিগত পরিচয় আমলে নেওয়া হয় না।
ইনস্টাগ্রামের চীনা সংস্করণ জিয়াওহংসুতে ২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে প্রথম হ্যাশট্যাগ ‘সেভিং দ্য জি’ ব্যবহার করা হয়। তথ্য বিশ্লেষণী সংস্থা নিউজর্যাংক জানিয়েছে, এ হ্যাশট্যাগ এখন পর্যন্ত ১৭ লাখ ভিউ হয়েছে। উইবোতে এটি কয়েক লাখবার ব্যবহৃত হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসির অধ্যাপক লু শি বলেন, মানুষের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিতে আস্থা কম বলে এ প্রবণতায় দেখা গেছে।
বিবিসি জানিয়েছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকটি অনলাইন সেভিংস গ্রুপে যোগ দিয়েছেন ক্যিথি। এসব গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যই ২০ থেকে ৪০ বছরের। তারা প্রতিদিন নিজেদের বাজেট ও খরচের নোট নোট রাখেন। একে অপরকে বাড়ি কেনাকাটা থেকে বিরত রাখেন।
ক্যাথি জানান, গ্রুপের এক সদস্য একটি বিলাসী ব্যাগ কিনতে চেয়েছিলেন। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৬ হাজার ২৯৩ টাকার মতো দামি। পরে গ্রুপের সঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করে সস্তা ও পুরোনো ব্যাগ কিনেন।
তিনি বলেন, গ্রুপের সবাই একই কাজ করেছেন। তারা সঞ্চয়কারী সঙ্গীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের অনুভূতি অনুভব করেন। এ দলভুক্ত হওয়ার পর মাত্র এক মাসেই তার ব্যয় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
মন্তব্য করুন